কয়েক গুণ বেড়েছে ফ্রিজের বিক্রি

প্রকাশিতঃ 4:01 pm | June 03, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বছরজুড়ে কমবেশি ফ্রিজ বিক্রি হলেও কোরবানির ঈদে বেড়ে যায় চাহিদা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে ফ্রিজ বিক্রি। তবে বিদেশি ব্র্যান্ডের চেয়ে দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের চাহিদা-বিক্রি হচ্ছে বেশি। দেশে ফ্রিজের বাজার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা না থাকলেও ধারণা করা হয়, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ফ্রিজের বাজারের আকার ১১ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা।

রাজধানীর শেখেরটেকের রাজিয়া-ফয়সাল দম্পতি ঈদ ঘিরে ঘর সাজানোর আয়োজনে এরইমধ্যে নিয়েছেন ফ্রিজ। এবার খুঁজছেন পছন্দের স্মার্ট টিভি। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন কিছু জিনিস যোগ হয়েছে। যেমন দুই সপ্তাহ আগে এখান থেকেই ফ্রিজ নিয়েছি। আজকে টিভি নিলাম।’

বছরজুড়ে কমবেশি ফ্রিজের চাহিদা থাকলেও বিক্রি বাড়ে কোরবানির ঈদ ঘিরে। পুরো বছরের মোট বিক্রির অর্ধেকের কাছাকাছি বিক্রি হয় ঈদুল আজহার আগে-পরে। দেশে স্থানীয় পর্যায়ে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ উৎপাদন শুরু হওয়ায় দাম ক্রেতাদের অনেকটাই নাগালে। কিস্তিতে কেনার সুযোগসহ ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ও মিলছে।

বিক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে দিই। আবার হোম ডেলিভারি ফ্রি দিয়ে দিই।’ রামপুরা ওয়ালটন প্লাজার ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ‘সাধারণ সময় যত সংখ্যক ফ্রিজ বিক্রি হয়, এখন তার চেয়ে তিন-চারগুণ বেড়েছে। তবে ঈদ হিসেবে বিক্রি আরও বেশি হওয়া দরকার ছিল।’

দেশে বছরে প্রায় ৩০ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিক্রি হয় দুই ঈদে। আর চাহিদার ৭০ শতাংশই গ্রামে। এ সুযোগে অনলাইনে নকল পণ্যও বিক্রে করছে অনেকে। প্রতারণা থেকে বাঁচতে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পণ্য কেনার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। দেড় দশকেই দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে ফ্রিজের বাজার। দেশে চাহিদা বাড়ছে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ হারে।

এবার গ্রামগঞ্জ কেন্দ্র করে সারাদেশে ফ্রিজের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে আরএফএল গ্রুপের ভিশন রেফ্রিজারেটরের হেড অব মার্কেটিং মোহিত চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ঈদের চেয়ে এবার ভিশন ফ্রিজের বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা দেখছি, শহরের চেয়ে জেলা ও উপজেলায় বিক্রি অনেক বেশি হচ্ছে এবার।’

কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে প্রতি বছর ২৫–৩০ লাখ ইউনিট ফ্রিজ বিক্রি হয়। সাধারণত এ বাজার বছরে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ে। আর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও ফ্রিজ রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এখন অর্ধশতাধিক দেশে ফ্রিজ রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ আছে।

বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ফ্রিজের বাজারের আকার ১১ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০২৯ সাল নাগাদ ফ্রিজের দেশিয় বাজার হতে পারে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও এ বছর ফ্রিজসহ ঈদ ঘিরে ইলেকট্রনিক্সের বাজারে চাহিদা কমেছে বলে দাবি ডিলারদের।

ডিলারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘কোরবানির ঈদে সাধারণত ডিপ ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন বেশি চলে।’ ফ্রিজের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই পূরণ হয় দেশিয় কোম্পানির মাধ্যমে। দেশে বর্তমানে ফ্রিজ উৎপাদন করছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ ফ্রিজ রপ্তানি হয়েছে। ৪০টির বেশি দেশে ফ্রিজ ও এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রপ্তানি হচ্ছে। যার সিংহভাগই রপ্তানি হয় ভারতে।

আগে দেশে বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের বড় বাজার থাকলেও এখন ভালো করছে দেশি কোম্পানিগুলো। ওয়ালটন, ভিশন, যমুনা, মিনিস্টার ও ওরিয়ন দেশে ফ্রিজ তৈরি করছে। এসব কোম্পানিসহ বর্তমানে ফ্রিজের বাজারে ১৩টির মতো দেশীয় ব্র্যান্ড রয়েছে। দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গার, স্যামসাং, কনকা, এলজি, ওয়ার্লপুল, হায়ার, হিটাচি, হাইসেন্স প্রভৃতি। আর শার্প, প্যানাসনিক, সিমেন্স প্রভৃতি বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজও দেশের বাজারে বিক্রি হয়।

কালের আলো/এমএএইচএন