বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার, নতুনদের নিয়োগ কমেছে
প্রকাশিতঃ 3:49 pm | May 31, 2025

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক, কালের আলো:
প্রযুক্তি খাতে সদ্য স্নাতকদের জন্য চাকরির পথ আগের চেয়ে অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠছে। শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নবীন পেশাজীবীদের (ফ্রেশার) নিয়োগের হার গত পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক একাধিক প্রতিবেদনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নাটকীয় পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি, যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রবাহ ও মানবসম্পদের চাহিদায় আমূল পরিবর্তন আনছে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ‘সিগন্যাল ফায়ার’-এর গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এন্ট্রি-লেভেল পজিশনে নতুনদের নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে ৫০% এরও বেশি।
আগে যেসব কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নবীন স্নাতকদের হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, এখন সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ৭ শতাংশে—এমনটা দাবি করেছে টেকক্রাঞ্চ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন কোনো সাময়িক মন্দার ফল নয়, বরং এটি এআই-এর দ্বারা চালিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরের প্রতিফলন। অনেক জুনিয়র লেভেলের কাজ এখন এআই সহজেই করতে পারে, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর অতটা নতুন কর্মী নিয়োগ করছে না।
লিংকডইনের সিনিয়র কর্মকর্তা অনিশ রামান বলেন, “যেসব কাজ একসময় নবীনরা করতেন, এখন এআই সেই কাজগুলোর বড় একটা অংশ করছে। ফলে নতুনদের জন্য প্রবেশদ্বার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।”
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “আমাদের কোম্পানিতে এআই এখন একজন মিড-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মতো দক্ষভাবে কাজ করতে পারে। এক বছরের মধ্যেই এআই বড় বড় প্রকল্পের কোডিংয়ের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন করতে পারবে।”
গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন, কোম্পানির নতুন কোডের ৩০% এর বেশি এখন এআই দিয়েই লেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট প্রধান সত্য নাদেলা জানিয়েছেন, তাদের অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সফটওয়্যার প্রকল্প এখন পুরোপুরি এআই দ্বারা পরিচালিত।
তবে প্রযুক্তি খাতে চাকরির সংখ্যা একেবারে কমে যাচ্ছে না। চলতি বছর প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৬০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০৩৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছাবে। কিন্তু ভিন্নতা হচ্ছে চাকরির ধরনে—এখন আর সাধারণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট জ্ঞান যথেষ্ট নয়, বরং এআই-সংক্রান্ত দক্ষতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি চাওয়া হচ্ছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮৭% কোম্পানি এখন এআই-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজছে। এমনকি চারটি চাকরির বিজ্ঞাপনের মধ্যে প্রায় একটিতে এআই স্কিল বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
চাকরির বাজারে এআই-এর প্রভাব এখন স্পষ্ট। আগের মতো শুধুমাত্র স্নাতক ডিগ্রি ও সাধারণ কোডিং দক্ষতা নিয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনকার চাহিদা অনুযায়ী, যারা মেশিন লার্নিং, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা অ্যানালাইসিস ও এআই টুল ব্যবহারে পারদর্শী, তারাই ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে এগিয়ে থাকবে।
কালের আলো/এমএএইচএন