তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে যে প্রস্তাব দিলো জামায়াত

প্রকাশিতঃ 9:32 pm | May 18, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একটি হচ্ছে সদ্যবিদায়ী প্রধানবিচারপতি হবেন কেয়ারটেকার সরকার প্রধান। আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে, কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান কে হবেন সেটার জন্য একটা সার্চ কমিটি হবে। এই সার্চ কমিটি কীভাবে গঠিত হবে, সেটার জন্য আবার আলাদা কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। তা হচ্ছে, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি, পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় প্রধান ও অ্যাক্টিং প্রধান বিচারপতি। এই তিনজন মিলে গঠিত সার্চ কমিটি একজনকে কেয়ারটেকার চিফ হিসেবে আমন্ত্রণ জানাবেন।

রোববার (১৮ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, যিনি সর্বোচ্চ সিনিয়র তিনি হবেন প্রধান বিচারপতি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রধান বিচারপতি করা সমীচীন হবে না এবং এমন ব্যক্তি হতে হবে, যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যেন কোনো অভিযোগ না থাকে।

তিনি বলেন, স্বাধীন জুডিশিয়ারির জন্য, সমাপ্তের জন্য জুডিশিয়ারি সেক্রেটারিয়েট তৈরির জন্য আমরা বলেছি। যাতে করে আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন ও আলাদা করার কথা আমরা বলেছি সেটাকে সহায়তা করবে।

জনপ্রশাসনের জন্য একটি স্থায়ী ও আলাদা কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, যে কমিশনের মাধ্যমে জনপ্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে। যদিও এটা নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তবে আমরা আমাদের যে প্রস্তাবনা সেখানে সে বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, জামায়াতে ইসলামী দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে কোনো সংস্কার চাইছে না। আমরা যে সমস্ত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম, যা আগের প্রস্তাবনা থেকে চেঞ্জ করেছি। আমরা ওনাদের সঙ্গে ঐক্যমত্য পোষণ করেছি। নতুন কিছু বাস্তবায়নে আমরা আলোচনা করেছি। তাও আমরা আগ্রহী ও সম্মত হয়েছি। আমরা সংকীর্ণ কোনো চিন্তা বা সুবিধাবাদী চিন্তা থেকে কাজ করবো না। মানুষের জন্য, দেশের জন্য কল্যাণকর সেটাই আমরা করবো।

কি কি প্রস্তাবনা আপনারা চেঞ্জ করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গাতেই যেন নৈতিকতার প্রতিফলন যেন থাকে সেজন্য আমরা বলেছি। জানতে চাওয়া হয়েছিল কোথায় কোথায়। আমরা বলেছি, যেমন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে আমরা আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ঐকমত্য পোষণ করেছি।

ওনাদের প্রস্তাবনা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা বাকি সদস্যদের নিয়োগ দিতে পারবেন। আমরা বলেছিলাম, একটা কমিটি থাকবে। সেই কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবে। আর সেই কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাকি সদস্যদের নিয়োগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে আমরা একমত হয়েছি যে, প্রধান উপদেষ্টাকে এটার ক্ষমতা দেওয়া দরকার, এই কারণে যে, অন্য উপদেষ্টা নিয়োগে যদি তার স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে মাত্র তিন মাসের একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গতি থাকবে না। তখন নির্বাচন আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সেজন্য আমরা একমত হয়েছি।

তিনি বলেন, ১৬৭টা বিষয়ের মধ্যে ১২০টার বেশি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তবে কিছু বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। যেমন : বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছি। কারণ আমরা ছোট্ট দেশ। চারটা ভাগ হলে এটার অভ্যন্তরীণ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। আমাদের দেশটা কিন্তু পাশের শক্তিশালী একটি বড় রাষ্ট্রের দ্বারা পরিবেষ্টিত।

এখানে উল্লেখ্য যে, আজ রোববার(১৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় ১২০টির বেশি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে জামায়াতে ইসলামী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সংস্কার প্রস্তাবে ঐক্যমত দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের নেতৃত্বে দলটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি(ভারপ্রাপ্ত) এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

কালের আলো/এসএকে