জৌলুস হারিয়েছে হালখাতা

প্রকাশিতঃ 10:26 am | April 14, 2025

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

বাংলা নববর্ষে আর বর্ষবরণের অন্যতম উৎসব ঐতিহ্যবাহী হালখাতা। এদিন সাধারণত ব্যবসায়ীরা লাল মলাটের নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসেব শুরু করেন। বিশেষ করে তারা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু বাঙালির চির চেনা মিলনমেলার উৎসব হালখাতা উদযাপনের দৃশ্য কার্যত দেখা যায় না। টালিখাতার বিক্রিও নেই আগের মতো। অ্যাপস আর সফটওয়্যারের প্রচলনে টালিখাতা এখন বিলুপ্তপ্রায়।

প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও পারস্পরিক আস্থার সংকটে ঐতিহ্যবাহী এই সৌহার্দ্য অনেকটাই রঙ হারিয়েছে। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি হালখাতার জৌলুস না থাকলেও পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্য হিসেবে হালখাতা পালন করেন। তবে এ নিয়ে গ্রাহকদের তেমন আগ্রহ নেই। যে কারণে হিসেবের খাতা ফাঁকা থাকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারের একাধিক জুয়েলারি দোকান ঘুরে জানা গেছে, বৈশাখের প্রথম দিনে দোকান সাজানো হবে ফুল দিয়ে। পুরনো খাতার বদলে দোকানে উঠবে নতুন খাতা। নতুন করে হিসাব সাজানো হবে নতুন বছরের। প্রথম দিনে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। সঙ্গে থাকবে ছোটখাটো উপহার সামগ্রীও। তবে নানা কারণেই এবার বৈশাখ হালখাতা আর আগের মতো জমজমাট হবে না।

তাঁতিবাজারে তিন যুগ যাবত ফেরি করে টালিখাতা বিক্রি করেন সিদ্দিক মিয়া। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে ফেরি করে এখানে টালিখাতা বিক্রি করি। অনেকেই আমার কাছ থেকে টালিখাতা কেনেন। বেচাকেনা ভালোই হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে এতো দোকান ছিল না। বিক্রিও এতো বেশি ছিল না। এখন বিক্রি বেশি। তবে টালিখাতার বিক্রি গত কয়েকবছরে অনেক বেশি কমেছে।

তাঁতিবাজারে সি ঘোষ জুয়েলার্সের কর্মচারী সম্বোনাথ ঘোষ বলেন, এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। আবার নানা জায়গায় নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণের দামও অনেক বেশি। দাম বেশি থাকায় স্বর্ণ এখন মানুষের নাগালের বাইরে।

তিনি বলেন, নতুন বছরে নতুন খাতা খোলা হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী সোমবার এখানে হালখাতা অনুষ্ঠিত হবে। হালখাতার দিন দোকানের কাস্টমারদের মিষ্টমুখ করানো হবে। গত কয়েক বছর ধরে হালখাতা আর জমজমাট হচ্ছে না। হালখাতা উপলক্ষে নিয়মিত ক্রেতাদের আমরা চাবির রিং, ঘড়ি, পার্স, ক্যালেন্ডার দিয়ে থাকি।

অঞ্জলি জুয়েলার্সের কর্মচারী অনিক সাহা বলেন, হালখাতা এবার বেশি ভালো হবে না। এবার বেচাকেনা কম। গত কয়েক বছর ধরে হালখাতায় এখন আর জৌলুস নেই।

স্থানীয় বাবুবাজার ঘুরে দেখা গেছে, টালিখাতার বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। কথা হলে বাবুবাজারের শরিফ প্রোডাক্টসের মালিক মনোয়ার বলেন, হালখাতায় ব্যবহৃত টালিখাতার বিক্রি অনেক কম। খাতার দাম অনেক বেশি। আগে ৬ দিস্তার অফসেট টালিখাতার দাম ছিল ২৬৬ টাকা, সেই খাতার দাম এখন ৪২০ টাকা। কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। খাতা বিক্রি করে এখন আমাদের কোনো লাভ থাকে না।

তিনি বলেন, আগে প্রচুর বিক্রি হতো। দিনে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার টালি খাতা বিক্রি করতে পারতাম। এখন মাঝেমধ্যে কোনো কোনো দিনে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়। চৈত্র মাসেই এইসব খাতা বিক্রি হয়ে থাকে। সারা বছর খুব একটা বিক্রি হয়না। টালি খাতা কেনার সিজনই এখন।

অপর এক দোকান আলমগীর প্রোডাক্টসের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ব্যবসা করি। এক সময় প্রচুর বিক্রি ছিল। টালিখাতার অনেক চাহিদা ছিল। এখন আর আগের মতো চাহিদা নেই। কাগজের দাম অতিরিক্ত বাড়ায় এখন আর মানুষ হালখাতাও করতে চায় না। মানুষ হালখাতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

কালের আলো/এমএএইচএন