জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু ইসি’র
প্রকাশিতঃ 9:45 am | March 15, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
এবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগেও একাধিকবার অভিন্ন বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরপরই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইলে অক্টোবরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য ছবিসহ একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে হবে।
সাধারণত অতীতে নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে শুরু করা হয়েছিল প্রস্তুতিমূলক কাজ। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি নিজে নির্বাচনী আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিল। নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও আয়োজন করা হয়েছিল।
জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে) প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করা যাবে বলে মনে করছে ইসি। তবে এটি চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। এর আগে নির্বাচন হলে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করতে আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতে পারে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করাও ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা আছে। আইন অনুযায়ী, কোনো আদমশুমারির পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে ও ইসি চাইলে যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করতে পারে। নির্দিষ্ট আইনের ভিত্তিতে কাজটি করতে হয়। সীমানা পুননির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করে শুনানির মাধ্যমে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর আসনবিন্যাস চূড়ান্ত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুননির্ধারণে দেড় মাস ও সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ কাজে চার মাসের মতো সময় নিয়েছিল ইসি।
জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগে ভাগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অন্য সামগ্রীর বেশ কিছু কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।
আর রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় ভোটের তফসিলের সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। আর প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এটি চূড়ান্ত করা হয় তফসিল ঘোষণার পর। এরপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে থাকে ইসি। নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক এ কাজগুলো অনেকটা ‘রুটিন ওয়ার্কের’ মতো। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তফসিল ঘোষণার পর সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব। এর আগে পরিবেশ তৈরির মূল ভূমিকা সরকার ও দলগুলোর।
ক’দিন আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না। তিনি বলেন, এই সময়সীমা যাতে পার না হয়, সে জন্য ইসি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরেই তফশিল ঘোষণা করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.) বলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিগত দিনে বিভিন্ন কারণে অনেকে ভোটার হতে পারেননি। অথবা কেউ কেউ অনীহার কারণে ভোটার হননি। ভঙ্গুর নির্বাচনী পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র উত্তরণের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভোটের প্রতি অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। তাই ৩০ জুনের মধ্যে আরেক দফা নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, এবারের ভোটার দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যাতে করে কেউ অস্বচ্ছ বা ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন না করতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাতের ভোট দেখতে চায় না কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২ মার্চ দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। ওই বছরের শেষে যোগ হয় আরও ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ ভোটার। এ ছাড়া রিভাইজিং অথরিটির যাচাই-বাছাইয়ে যোগ হয় আরও ৪৮ হাজার ৭৬২ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ। নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন এবং হিজড়ার সংখ্যা ৯৯৪। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় ভোটার দিবসে হালনাগাদ এই ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ভোটার বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
কালের আলো/এমএসএকে/এমকে