এবার সীমান্ত সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে কথার ‘টোনটা’ আলাদা হবে

প্রকাশিতঃ 1:15 pm | January 29, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য সীমান্ত সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের ‘টোনটা’ (কণ্ঠস্বর) ভিন্ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এর আগে আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের নয়াদিল্লিতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়াদি আলোচনা করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয়রা অনেক সময় মাদক তৈরি করে। সেখানে তারা ফেন্সিডিল তৈরি করে আমাদের দেশে ঢুকিয়ে দেয়। তারা ফেন্সিডিলগুলো ওষুধ হিসেবে বানাচ্ছে বললেও আসলে এটা মাদক হিসেবেই বানানো হয়।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো কাজ করতে হলে দুই পক্ষে অনুমতি নিতে হয়। এগুলো একপক্ষে করার নিয়ম নাই। যদিও তারা এভাবেই করতে চায়। উন্নয়নমূলকভাবে একটা মসজিদ বা মন্দির করতে হলে দুই দেশের সম্মতি প্রয়োজন হয়। আগামীতে কিছু করতে হলে যেন তারা সম্মতি নেয় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বা কাউকে আহত করা বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলনে বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা আটক করা বন্ধ করতে আলোচনা করা হবে। বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন বা অবৈধ পারাপার অথবা অনুপ্রবেশ বন্ধে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয়, এরকম চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন কারার বিষয় আলোচনা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, নদী থেকে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রহিমপুর খালের মুখ পুনঃউন্মুক্তকরণ নিয়েও আলোচনা হবে।

এবার তো বিষয়গুলোর মধ্যে নতুনত্ব কিছু দেখছি না- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি নতুনত্ব কোনটা চাচ্ছেন। নতুনত্ব হলো ওটা, আগে যেভাবে কথাটা বলতো, এবার কথার টোনটা আলাদা হবে।’

বিজিবি -বিএসএফ বৈঠকে আলোচনার বিষয় থাকবে:

ক) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো/আহত করা বন্ধ করা।

খ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া/আটক করা বন্ধ করা।

গ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন/অবৈধ পারাপার/অনুপ্রবেশ বন্ধ।

ঘ) ভারত হতে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ।

ঙ) সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কর্তৃক অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণকাজ এবং বিএসএফের বাঁধায় বন্ধ থাকা বাংলাদেশ পার্শ্বের উন্নয়নমূলক কাজ নিষ্পত্তি করা।

চ) আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয় এরূপ চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন।

ছ) বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীসমূহের পানির সুষম বণ্টন, নদী হতে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন ও রহিমপুর খালের মুখ পূণঃউন্মুক্তকরণ।

জ) বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতিকারী/অপরাধী কর্তৃক আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ

ঝ) বিতর্কিত মুহুরীর চর এলাকায় সীমানা নির্ধারণ, বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার পিলারে স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা।

ঞ) বাংলাদেশের বর্তমান বিরজমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গনমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো।

ট) সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Coordinated Border Management Plan-CBMP)’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন

ঠ) পারস্পারিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ।

দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ও দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ সমুন্নত রেখেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

কালের আলো/এএএন/কেএ