কেন ‘হাওয়া’ বিএনপি’র সেই বুদ্ধিজীবিরা ?

প্রকাশিতঃ 4:54 pm | February 18, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনকে দৈনিকে রূপান্তর করেছিলেন শফিক রেহমান। ওয়ান ইলেভেনে পত্রিকাটি থেকে তিনি পদত্যাগ করে ‘মৌচাকে ঢিল’ প্রকাশ করেন। এখন একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখলেও রাজনৈতিক তৎপরতা পুরোপুরি কমিয়ে দিয়েছেন।

দুর্নীতির মামলায় দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ৫ বছরের সাজা নিয়ে কারাবরণ করলেও ‘দলীয় বুদ্ধিজীবি’ হিসেবে পরিচিত শফিক রেহমানের মুখে কথা নেই। ক’দিন আগে তাঁর লেখা কলামেও খালেদা প্রসঙ্গ অনুপস্থিত। স্ত্রী তালেয়া রেহমানের অসুস্থতার অজুহাতে তিনি এখন দেশের বাইরে। তবে এ পরামর্শকের রাজনীতি থেকে কৌশলে সটকে থাকা নিয়ে দলীয় পরিমন্ডলেই নানান কানাঘুষা হচ্ছে।

একই অবস্থা দলটির আরো দু’জন বুদ্ধিজীবি বন্ধ থাকা দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের ক্ষেত্রেও। খালেদা জেলে যাওয়ার পরও বিএনপি’র কোন কর্মসূচিতে বা ব্যানারে তাদের দেখা যায়নি।

সূত্র মতে, মাহমুদুর রহমান ২০১৩-১৪’র মতো ‘আক্রমনাত্নক’ আন্দোলন কর্মসূচি’র পক্ষে নিজের মত জানিয়েছে নিজ ঘরনার পেশাজীবি ও শীর্ষ নেতাদের। বিএনপি’র অহিংসু কর্মসূচি তাঁর কাছে চরম অপছন্দ। ফলে ইচ্ছা করেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের শাস্তি দাবিতে গর্জে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের ঘোর বিরোধী জামায়াতী ভাবাপন্ন এ দলীয় পরামর্শক।

এ তিনজনকে ছাড়াই শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির দশ সিনিয়র নেতা।

কিন্তু দলীয় চরম সঙ্কটের মুহুর্তে শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের এভাবে ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের মাঝেই এখন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতার সময়ে নানাভাবেই সুবিধা নিয়েছেন দলটির এ তিন বুদ্ধিজীবি ও পরামর্শক। নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন পদত্যাগ করলে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান মাহমুদুর রহমান। উত্তরা ষড়যন্ত্রের বৈঠকেরও মূল ‘কুশীলব’ হিসেবে ধরা হয় তাকে।

পরবর্তীতে জোট সরকার ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম দিকে খালেদা ‘ঘনিষ্ঠ’ মোসাদ্দেক আলী ফালু’র মালিকানাধীন দৈনিক আমার দেশ ও মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী’র নয়া দিগন্তে কলাম লিখতেন তিনি।
হঠাৎ করেই তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক’ বনে যান। ফালু’র কাছ থেকে পরে পত্রিকাটি তিনি কিনে নেন। তাঁর সম্পাদনায় অব্যাহতভাবে চরম বিতর্কিত, উস্কানীমূলক ও একপেশে সংবাদ প্রকাশের জেরে বন্ধ হয়ে যায় আমার দেশ। গ্রেফতার হয়ে ৫ বছর কারাগারে কাটাতে হয় তাকে।

সম্প্রতি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে একটি মানববন্ধনে অংশ নিলেও রহস্যজনক কারণে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গুলশানে পেশাজীবীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকেও অংশ নেননি দলটির পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান। এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তবে জোট সরকারের মেয়াদে ব্যাপক ‘ক্ষমতাধর’ এ প্রকৌশলী জামায়াতী ছকে আড়ালে আবার নতুন কোন কোন বুদ্ধি আঁটছেন কী না এমন সন্দেহও তৈরি হচ্ছে দলের ভেতরেই।

তাদের ভাষ্যে, জামায়াতকে দূরে রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি’র পন্থায় এগিয়ে রাইট ট্র্যাকেই আছে দলটি। এখন মাহমুদুরের কথা কানে তুললে আবারো ২০১৩-১৪’র মতো ভুলের চরম খেসারত দিতে হবে। দলের হাইকমান্ডের কাছে নিজের মতামত গুরুত্ব না পাওয়ায় এক রকম কষ্ট থেকেই তিনি সব থেকে দূরে সরে আছেন বলেও গুঞ্জণ রয়েছে।

দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে আরেক বুদ্ধিজীবি শফিক রেহমানের ওপরও। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা’র ভাষণ লেখা থেকে শুরু করে হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেকের বিশেষ পছন্দের মানুষ ছিলেন শফিক রেহমান। তিনি দলটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার হয়ে প্রায় চার মাসের মাথায় জামিনে মুক্ত হয়ে সোজা বাসায় ফিরেন শফিক রেহমান। এরপর দলীয় রাজনীতির সংস্পর্শে আসেননি। শোনা যায়, কারামুক্ত হওয়ার পর খালেদা’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেননি। এখন আবার দলের কোন কর্মসূচিতেও তাঁর দেখা মিলছে না।

স্ত্রী’র অসুস্থতায় সাময়িক সময়ের জন্য দেশের বাইরে আছেন বলেও শফিক রেহমানের পক্ষ থেকে একটি গণমাধ্যমকে জানানো হলেও ভেতরে ভেতরে বিদেশেই স্থায়ীভাবে নিজেকে সেটেল করতে চাইছেন তিনি। সেখান থেকেই একটি অনলাইন করারও ভাবনা-চিন্তা করছেন। এমন কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে।

এ দু’পরামর্শকের মতোই বিএনপি’র রাজনীতি থেকে সটকে আছেন হেফাজতের সময়ে আলোচিত রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। গত বছরের জুলাইতে ‘স্বেচ্ছা নিখোঁজ’, পরে ফিরে আসা, কয়েক মাস পর পুনরায় পুলিশকে দোষারোপ করা ইত্যাকার ঘটনায় নিজেকে চরম বিতর্কিত করেছেন তিনি।

তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেও কোন রকম কথা বলেননি মজহার। দলের দু:সময়ে তাঁর এমন নীরবতা নিয়েও সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপি’র অনেক নেতা-কর্মীর মনেই।

আরও পড়ুন: বিএনপি’র আবোল-তাবোল রিজভী!

 

কালের আলো/এসসি/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email