রেলের ব্যয় সংকোচন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার

প্রকাশিতঃ 12:18 pm | November 30, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

রেলের ব্যয় সংকোচন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। ৫টি প্রকল্প থেকে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমাচ্ছে সরকার। সব মিলিয়ে ৫টি প্রকল্প থেকে সাশ্রয় হচ্ছে ৮ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতেই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি ছয় হাজার ৬৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে। মূল প্রকল্প থেকে ব্যয় কমেছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে ৬২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এরই মধ্যে ব্যয় কমানোর চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় সই করেছেন। মূলত এসব প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, পূর্ত প্যাকেজ, পুনর্ভরণযোগ্য সিডি-ভ্যাট, পরামর্শক নিয়োগ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ আনুষঙ্গিক খাত থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহামদ বলেন, সবচেয়ে বেশি ব্যয় কমছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পে। আমরা প্রকল্পের নানান খাতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। প্রথমে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাদের অংশে রেলপথ নির্মাণ না করায় বাংলাদেশের ওই অংশটুকুর কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পেও ব্যয় কমানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হচ্ছে। সেখানেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমছে। যেমন- যমুনা নদীর ওপর রেলসেতুসহ বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। ঠিকাদাররাও ব্যয় কমিয়েছেন। এখন কিন্তু ঠিকাদারদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয় না। এসব কারণে ব্যয়ও কমছে।

জানা যায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখন ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনে মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়বে। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন; ঢাকা-যশোর করিডোরে অপারেশনাল সুবিধাদির উন্নয়নসহ সংক্ষিপ্ত রুটে বিকল্প রেল যোগাযোগ স্থাপন; বাংলাদেশের মধ্যে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা নতুন করে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প ঋণ কমানো ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত কারণে ব্যয় বেড়েছে ৭১১ কোটি টাকা। এনবিআর প্রকাশিত সার্কুলার অনুযায়ী, আইটি ভ্যাটের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এ খাতে বেড়েছে ৫০৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদেশ থেকে আমদানি করা মালামালে সিডি-ভ্যাটসহ সব ধরনের ট্যাক্স সরকারের নির্বাহ করতে হবে। তাই পূর্ত কাজের মালামাল বিদেশ থেকে আমদানির জন্য সিডি-ভ্যাট খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) শেখ সাকিল উদ্দিন আহমদ বলেন, নানা কারণে সার্বিকভাবে পাঁচটি প্রকল্পের ব্যয় কমছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় কমছে কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথে। পদ্মারেল সংযোগসহ আরও কিছু প্রকল্পের ব্যয় কমছে। সব প্রকল্পের ডিপিপি পুনরায় বিশ্লেষণ করেই ব্যয় কমানো হয়েছে।

কালের আলো/এমএএইচইউ