যে নামাজ প্রশান্তির কারণ
প্রকাশিতঃ 11:59 am | September 27, 2024
মাহমুদ আহমদ, কালের আলো:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, এ পৃথিবীতে যত প্রকার ইবাদত বা উপাসনার পদ্ধতি রয়েছে এর সম্মিলিত ও পরিপূর্ণরূপ হলো নামাজ। নামাজ হলো ইবাদতের ভিত্তি। কেননা মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ ধর্মের স্তম্ভ।’ স্তম্ভ বা খুঁটি ছাড়া যেমন অট্টালিকা বা ঘর নির্মিত হতে পারে না তেমনি নামাজ ছাড়া ধর্ম হতে পারে না। সুতরাং আধ্যাত্মিক সফরের দিক থেকে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার চোখের স্নিগ্ধতা বা প্রশান্তি আমার নামাজের মধ্যে।’ জাগতিক জীবনের সকল পেরেশানি ও অস্থিরতা হতে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো নামাজ। নামাজ তথা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে বিরোধাত্মক শক্তি সহায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মানুষের আধ্যাত্মিক যাত্রা পথে যথেষ্ট অবদান রাখে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে।’ (সুরা আন কাবুত: আয়াত ৪৫) মূলত একজন প্রকৃত নামাজি যে সব ধরনের অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে। নামাজ আধ্যাত্মিক গোসল স্বরূপ। আধ্যাত্মিক যাত্রা পথে নামাজ এক স্নেহময়ী মায়ের মত, প্রকৃত নামাজ নামাজির আত্মার সব নোংরা ময়লা কালিমা ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে চোখের স্নিগ্ধতা আর আত্মার প্রশান্তির কারণ হয়। শুধু নামাজ আদায় করলেই হবেনা বরং নামাজের নির্ধারিত দোয়া শেষে ব্যক্তিগত, দেশ ও সমাজের জন্য অনেক বেশি দোয়াও করতে হবে।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু জীবিত ও দয়ালু। কোন বান্দা তার নিকট হাত তুললে তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (তিরিমিজি ও আবু দাউদ) নামাজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বার বার নির্দেশনা এসেছে। এছাড়া মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহ পাকের ইবাদত করা। সুরা ইবরাহিমে আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য এভাবে ঘোষণা করেন- ‘আমার বান্দাদের বল, ‘যারা ঈমান এনেছে তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে গোপন ও প্রকাশ্য ব্যয় করে, ঐ দিন আসার আগে; যে দিন কোনো বেচা-কেনা থাকবে না এবং থাকবে না বন্ধুত্বও।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩১)
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন শ্রেষ্ঠ দোয়াকারী। তার জীবদ্দশায় তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে, তাহাজ্জুদের নামাজে, নফল ইবাদতের সিজদায়, রুক‚তে, দাঁড়িয়ে, বসে এত অধিক দোয়া করতেন যে, দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো ও রুক‚তে থাকার কারণে তার পা ফুলে যেত। এ ছাড়া সর্বাবস্থায় তিনি আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়া করেছেন, যা হাদিসে দোয়া হিসেবে মানুষের জন্য অমূল্য সম্পদ ও পাথেয় হয়ে রয়েছে।
হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রেওয়ায়াত করেন, আমি উমরা হজ করার জন্য মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলাম। তিন অনুমতি প্রদান করলেন, আর বললেন, ‘হে আমার ভাই! আমাদেরকে তোমার দোয়ায় ভুলে যেওনা’। উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন সত্তা ছিলেন তিনি, যিনি সমস্ত জাহানের জন্য দোয়া করতে থাকেন আজীবন, পূর্ববর্তীদের জন্য ও পরবর্তীদের জন্যও এবং কিয়ামতকাল অবধি, যার দোয়া সমূহ হচ্ছে আমাদের পুঁজি। তার বিনয়ের মোকাম ও মর্যাদা লক্ষ্য করুন। তার অমায়িকতা দেখুন। হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলছেন, ‘হে আমার ভাই! নিজের দোয়াতে আমাদের কথা ভুলে যেওনা।’ তখন হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলছেন, হুজুরের কথায় আমি এত আনন্দ বোধ করি যে, এর বিনিময়ে যদি সারা দুনিয়া আমি পেয়ে যাই তবুও ততোটা আনন্দ বোধ করবো না’ (তিরমিজি, কিতাবুদ দাওয়াত)।
হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এজন্য খুশী হয়েছিলেন, তিনি রাদিয়াল্লাহু আনহু জানতেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার জন্য বলা, এতে একটি সুসংবাদ নিহিত ছিল যে, তার (রা.) দোয়া কবুল হবে, এর মোকাবেলায় যদি সমস্ত দুনিয়া পেতেন তাতে তিনি ভ্রূক্ষেপ করতেন না। এছাড়া আমাদের মনে সব সময় এই ধারণা রাখার চেষ্টা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো, আল্লাহতায়ালা আমাকে দেখছেন।
হাদিসে এসেছে হজরত রাসুল পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে (ভাবো) তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) তাই আমরা যদি এমনভাবে নামাজ আদায় করি তাহলে আমাদের নামাজ হবে জীবন্ত আর নামাজ পড়ে বিশেষ এক তৃপ্তি পাবো।
মূলত যে নামাজে আন্তরিকতা, দোয়া ও নিষ্ঠা থাকে সেই নামাজ মানুষের চোখের স্নিগ্ধতা আর অন্তরের প্রশান্তির কারণ হয়। আল্লাহপাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।