প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে নির্বাচন : পরিবেশ উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 9:26 pm | September 12, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে একমত বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর ফয়েন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের ছয়টি সেক্টরের সংস্কার নিয়ে ছয়টি কমিশন গঠন বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, এই কমিশনগুলোর কার্যপরিধি এখনও ঠিক করা হয়নি। তারা প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিশনগুলোতে সাচিবিক সহায়তা দেবে। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সম্মেলন শেষে টার্ম অব কন্ডিশন ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্যান্য সদস্য ঠিক করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি তিন মাসের মধ্যে কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিতে পারবে।
এরশাদ সরকারের সময় এ ধরনের কমিশন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিশনের প্রতিবেদন আলোক মুখ দেখেনি। এবার কী সেটা হবে কী না– এমন প্রশ্নের জবাতে রিজওয়ানা বলেন, এরশাদ সাহেবের সময় আর এবারের বাস্তবতাটাও ভিন্ন, প্রেক্ষিতটাও ভিন্ন। কিন্তু এই প্রতিবেদন আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐক্য এটার সপক্ষে আমরা কতটা গড়ে তুলতে পারি তার ওপর। এজন্য সংস্কারের বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত চাচ্ছি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নিশ্চয়ই এ উপলব্ধি আসছে।
তিনি বলেন, এরশাদ সরকার করে যেতে পারেনি, তার ফল কী হয়েছে এটা রাজনৈতিক দলগুলো দেখেছে। তারাও (রাজনৈতিক দল) কোনও সংস্কার করেনি। এর ফল কী হয়েছে সেটাও ৫ আগস্ট জাতি দেখেছে। কোনও রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই অজনপ্রিয় হয়ে আবার একই রকম ফলাফল দেখতে চাইবে না। এজন্য প্রথম থেকেই আমরা মতবিনিময়ে তাদের (রাজনৈতিক দল) অন্তর্ভূক্ত করেছি। এক পর্যায়ে আমরা সংলাপে যাবো। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তারপরে আমরা নির্বাচনের কথা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছে যে আগে সংস্কার ও পরে তারা নির্বাচনে যেতে যায়।
গণহত্যার বিচারে শেখ হাসিনাকে উপস্থিত থাকতে হবে
গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (উপস্থিত) থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তবে কোনও পদ্ধতিতে তার প্রত্যাবর্তন হবে সেটা আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
‘শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে আমরা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি। ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার থেকে নেনিবাচক মন্তব্য শুনতে পাচ্ছি’– এ বিষয় দুটি উল্লেখ করে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আমাদের অবস্থানটা স্পষ্ট। গণহত্যার যে অভিযোগটা রয়েছে তার বিচারের স্বার্থে এবং নির্যাতন-নিপীড়নসহ সর্বোপরি একটি ফ্যাসীবাদী ব্যবস্থার মুখপাত্র হিসেবে বিচারের প্রক্রিয়ায় তাকে থাকতে হবে। কারণ দায়দায়িত্ব এখানে একটা ব্যাপার আছে। সেই প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সেই প্রত্যাবর্তনটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, দুই দেশের মধ্যে কীভাবে কথা হবে, সেই প্রক্রিয়া– এগুলো পরের ব্যাপার। যখন আইনি প্রসেসটা শুরু হবে তখন এগুলো আমরা দেখবো।
নেতিবাচক মন্তব্য প্রশ্নে তিনি বলেন, নেতিবাচক বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। আমরা গত ১৫ বছর বেশিরভাগ মানুষই এ দেশে ছিলাম। সেই বাস্তবতাটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা হবে আমাদের পাশের দেশসহ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা। তবে সেটা হতে হবে ন্যয্যতা আর সমতার ভিত্তিতে। এটা বার বার স্পষ্ট করা হচ্ছে। এখানে কোনও নতজানু নীতির বিষয় নেই। যেটা আমাদের অধিকার, আমাদের প্রাপ্য এবং যেটা আমাদের বিবেচনায় সঠিক সেই কথাগুলো যে যে চ্যানেলে আমাদের বলা দরকার– তা সেটা কূটনৈতিক হোক, রাজনৈতিক হোক বা ব্যক্তিগত বা আন্তর্জাতিক হোক আমরা সেটা বলবো।
কালের আলো/এমএএইচ/এইচকে