চকবাজারে ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানালেন আইজিপি
প্রকাশিতঃ 10:52 am | February 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানী ঢাকার চকবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। তবে লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটার দিকে অগ্নিকান্ডস্থল পরিদর্শন শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইজিপির সঙ্গে ছিলেন।
কেমিক্যাল গোডাউন ভবনে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল উল্লেখ্য করে আইজিপি বলেন, ওই ভবনে খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়েও পড়ে। আশপাশেও তা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে তা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।
তিনি বলেন, এখন পুরো ভবন খুঁজে দেখা হচ্ছে আর কোনো মৃতদেহ আছে কি না। আমরা মনে করছি, আরও কয়েকজনের মৃতদেহ থাকতে পারে। পুরো ভবনটি খুঁজে দেখার পর তা বোঝা যাবে।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, একদিকে তো সেখানে রাসায়নিক গুদাম, তার ওপর ওই ভবনের সামনে কয়েকটি গাড়ি ছিল, যেগুলো গ্যাসে চলে। এই আগুনের কারণে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি গাড়ি ছিল, যার ভেতর ছিল অনেকগুলো সিলিন্ডার। ওই সিলিন্ডার হয়তো আশপাশের বাড়িতে ও হোটেলে গ্যাস সরবরাহের জন্য ছিল। ওই গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ কারণে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়। আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়া তিনটি হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি দেওয়া হয় আগুন নেভানোর জন্য।
আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গোডাউনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ ধরনের আবাসিক এলাকা, জনবহুল এলাকার মধ্যে কেমিক্যাল গোডাউন থাকা উচিত না। এখনই সময় এগুলো সরিয়ে নেওয়ার।’
এ সময় সাংবাদিকেরা পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর ক্ষেত্রে অনেকগুলো পক্ষ কাজ করে। পুলিশ তো অবশ্যই ভূমিকা রাখবে, কাজ করবে। তবে তার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং সরকারের যে অন্যান্য দপ্তর আছে, যারা এগুলো মনিটর করে, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরানোর। এগুলো সরানোর কাজ এখনই শুরু করা উচিত।
এর আগে বুধবার(২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টা ১০ মিনিটে চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে আগুন লাগে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও আবারও বেড়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
দিবাগত রাত সোয়া ৪টার দিকে আগুন নেভাতে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছেটানো হয় বলে জানানা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন।
তিনি জানান, বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ৩টা ৪৮ মিনিটে পানি নিয়ে হেলিকপ্টার দুটি ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়। এরপর আকাশ থেকে পানি ছেটানো হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৪০টি ইউনিট।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করেন। এসময় তিনি সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে নগরবাসী, দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের আলী আহাম্মেদ খান বলেন, আগুন লাগার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৪০টি ইউনিটের দুইশতাধিক ফায়ার ফাইটার্স কাজ করে। এই জায়গাটা আসলে সংকীর্ণ, আমাদের পানির সঙ্কট হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল আছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি।
কালের আলো/এনএল/এমএইচএ