৪৯ বছরে পিজিআর; সাহসিকতা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 10:47 pm | July 07, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অতিথি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর)। যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে অর্জন করেছে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা। সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট পিজিআর সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণ করেছে ৪৯ বছর। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, উন্নত প্রশিক্ষণ আর দৃঢ় মনোবলে সমৃদ্ধ চৌকস এই বাহিনীর সদস্যদের সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডদের লক্ষ্য’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশপ্রেমের শপথে বলিয়ান হয়ে সর্বদা দায়িত্ব পালন করে আসছেন।’ এই কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমে এই গার্ড রেজিমেন্ট আগামীতে আরও দক্ষতা অর্জন করবে বলেও দৃঢ় আশবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

রোববার (০৭ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসস্থ পিজিআর সদর দপ্তরে ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণিল আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাঙালি জাতির গর্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত অংশ, চৌকস সেনাবাহিনীর প্রতিচ্ছবি পিজিআর এর প্রশংসনীয় ভূমিকার সারি সারি চিত্রপট তুলে ধরেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দপ্তরে এসে পৌঁছলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল তাকে স্বাগত জানান। তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আত্মাহুতি দানকারি পিজিআর সদস্যদের পরিবারের কাছে অনুষ্ঠানে অনুদান ও উপহার হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সুসংহত বাহিনী হিসেবে পিজিআর এর আত্মপ্রকাশ
কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিন্টে (পিজিআর) অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পিজিআর-এর সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার-সকলের নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পিজিআরের সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

পিজিআর সদস্যদের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি আমার জীবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, এখানে যারা দায়িত্ব পালনে আসনে তারাও ঝুঁকি নিয়েই এখানে আসেন। তাই, তাদের নিরাপদ জীবনের জন্য তিনি তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য যখন দোয়া করেন তখন আশেপাশে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তাঁদের জন্যও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন বলেও উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সব থেকে বেশি অবদান রাখছে
বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সব থেকে বেশি অবদান রেখে যাচ্ছে এবং কর্তব্য পালনস্থলের মানুষের হৃদয়ও তারা জয় করে আনেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, সেটার জন্য তিনি গর্বিত। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে তাঁর সরকার গঠনের উল্লেখ করে বলেন, যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা শুরু করি। তিনি, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসন এবং বার বার ক্যু এবং এর ওজর তুলে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা এবং প্রবাসে তাঁর ৬ বছর রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে ’৮১ সালের ৭ জুন ৬ দফা দিবস পালনকালে তাঁর প্রথম বক্তৃতার কথাও এখানে উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন আমি বলেছিলাম যে আমি সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোন বিধবার কান্না শুনতে চাই না। সন্ত্রানহারা পিতার বা পিতাহারা সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। তখন থেকে আমার প্রচেষ্টাই ছিল যারা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সেটাকে আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী করা। যেখানে সংঘাত নয় শান্তি থাকবে।’ তখন থেকে একটাই চেষ্টা ছিল যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সে দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।

একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আরো উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ’৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ওয়ার কলেজ’ আমি গড়ে তুলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ’৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার অন্তর্ভূক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে।’

বাংলাদেশ ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ মহাকশে উৎক্ষেপন করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা ও ইন্টারনেট সংযোগ, বিনামূল্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক, সাধারণ বৃত্তি-উপবৃত্তি এবং গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশটাকে আর্থসামাজিক ভাবে আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। যারা স্বাধীনতার সময় বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে এটাতো বটমলেস বাস্কেট হবে-সেটা আর তারা বলতে পারে না। বরং বলতে হয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে আমরা ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।’

উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তাঁর সরকার পৌঁছে দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে আমাদের বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ২ ভাগে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও বহুমুখি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। দারিদ্রের হার ২০০৬ সালে থাকা ৪১ দশমিক ৬ ভাগ থেকে নামিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এনেছি।

তিনি বলেন, যদি করোনা মহামারি না হতো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না হতো, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন না হতো, আর মুদ্রাস্ফীতি না হলে আমাদের লক্ষ্য ছিল এই দারিদ্রে হার আরো ২ শতাংশ কমানোর। কারণ, যে বড় দেশ বলেছিল আমরা বাস্কেট কেস হব সেখানে দারিদ্রের হার ১৭ শতাংশ।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের প্রত্যেক ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনাপয়সায় ঘর করে দেওয়ার লক্ষে গৃহীত তাঁর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে দারিদ্রের হার আরো কমিয়ে আনার জন্যই সবাইকে সবক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধনের ও অনুরোধ করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে