গেটলক সিস্টেম না মানলেই মামলা: ডিএমপি কমিশনার
প্রকাশিতঃ 8:54 pm | May 14, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানীর যানজট নিরসনে চালু হয়েছে আন্তঃজেলা বাসের গেটলক সিস্টেম। মহাখালী থেকে ছেড়ে বনানী পর্যন্ত যেসব বাস গেটলক সিস্টেম না মেনে যত্রতত্র যাত্রী তুলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৪ মে) তেজগাঁওয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত ট্রাফিক সেফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ও রোড সেফটি স্লোগান প্রতিযোগিতা-২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গেটলক চেকিং সিস্টেমে টার্মিনাল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কোথাও দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গন্তব্যে চলে যাবে। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরী এলাকায় মহাখালী একটি বড় বাস টার্মিনাল। টার্মিনালে যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে সেখানে ৪০০ গাড়ি পার্কের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখানে প্রতিদিন ১৮০০ গাড়ি চলাচল করে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে গাড়িগুলো রাস্তার মধ্যে পার্ক করা হতো। মহাখালী থেকে আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরা হয়ে যে গাড়িগুলো ঢাকার বাইরে যায় সেই গাড়িগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে বনানী পর্যন্ত একটু একটু করে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে তুলতে যেত। বিশেষ করে মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে যাত্রীরা জড়ো হলে সেখান থেকে বাসগুলো যাত্রী তুলতো। এটিই মহাখালী এলাকায় যানজটের অন্যতম কারণ।
মহাখালী বাস মালিক শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, যানজট কমানোর উদ্দেশ্যে মহাখালী থেকে যে গাড়িগুলো ছাড়বে তারা বনানীর আগে কোনোভাবেই পার্ক করবে না, কোনো যাত্রী তুলবে না এবং যাত্রী নামাবে না। ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমে দেখা গেছে, কোনো কোনো গাড়ি এ নিয়ম অমান্য করেছে। নিয়ম না মানা এরই মধ্যে ১৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যখন মহাখালী বাস টার্মিনাল চালু হয় তখন থেকেই রাস্তায় পার্ক করে যাত্রী নেওয়ার কার্যক্রম চলে আসছে। এতদিন পরে কাজটি শুরু হয়েছে। তবে শতভাগ প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সময় লাগবে। এটি বাস্তবায়নে যাত্রী ও বাসের সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করা হবে।
একই রাস্তায় তিন রকমের গাড়ির গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো গাড়ি যদি ওভারটেকিং করতে যায় তাহলে দুর্ঘটনা বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, একজন চালক রাস্তার অবস্থা বুঝে গাড়ি চালান। আমাদের ঢাকা মহানগরীতে বড় গাড়ির জন্য ৪০ ও মোটরসাইকেলের জন্য ৩০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বৈধ ওভারটেকিংয়ের কোথাও ব্যবস্থা নেই। পরিস্থিতি বুঝে চালক বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে ওভারটেকিং করলে সমস্যা হবে না।
গাড়ির মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব যাত্রীবাহী গাড়ি রয়েছে সেসব গাড়ি রাস্তায় কোনো সার্জেন্ট আটকাবে না। তবে সেই গাড়ি যদি গতিসীমা ভঙ্গ করে ও দুর্ঘটনা ঘটায় সেক্ষেত্রে আটকানো হবে।
ঢাকায় ৩৫০ সিসির বাইক ৩০ কিমি গতিতে চালানো কঠিন
এরমধ্যে আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ডিএমপি কমিশনারের কাছে জানতে চান, ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল পার্মিড হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কে চলাচলে গতি সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার। তবে সড়কে চলতে গিয়ে এই গতিতে গাড়ি খেই হারিয়ে ফেলবে। এটা কি সাংঘর্ষিক নয়?
উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুটি কথাই সঠিক। গতি সীমার কথা বলেছে সেটিও ঠিক, আবার সিসির বিষয়ও ঠিক। আইনটি করেছে বিআরটিএ। আর মোটরসাইকেলের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। রাজধানীতে এমন সিসি মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতি সীসার মধ্যে চালানো কঠিন। আমি মনে করি একটি বিষয় হয়তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা করেছে, সেটি দেখতে চাই হাইওয়েতে। কারণ এই নির্দেশনা মতে রাজধানীতে চালানো কঠিন।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রোবটিক সিস্টেম চালু করা যায় কি না- অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হয়েছে। একটি পরিকল্পনাপত্র পুলিশ সদরদপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও চিন্তা চলছে। রাজধানীতে যদি এটি করতে পারি তবে এআই বেজ সিসি ক্যামেরার ওপর ভিত্তি করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে সক্ষম হবো।
সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ির অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয়। এজন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা ডিএমপি নিচ্ছে কি না- আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলেই রাজউকের অনুমতি লাগে। সেখানে রাজউকের কিছু শর্ত থাকে, যেমন- কতটুকু জায়গা ছাড়া হবে, পার্কিং লট রাখাসহ নানা শর্ত। কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশই সেগুলো মানছে না। এদিকে আমরা নিজেরাও অনেক অসচেতন, যতটুকু আইন রয়েছে ততটুকু মানছি না। ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, আমরা কেউই আইন ঠিকমতো মানছি না। সবার সচেতন হওয়ার দরকার। একটি ভবন নির্মাণ করলে সেখানে পার্কিং রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। নিজের গাড়ি ও তার বাসায় আসা মেহমানের গাড়িটিও যাতে পার্কিং করে রাখা যায়। এতে সড়কে অবৈধ পার্কিং করার প্রয়োজন হয় না।
ডিএমপি আরও কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা, সে অনুযায়ী সড়কে পথচারী ও গাড়ির চাপে মানুষের চাপা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ঢাকা সোনারগাঁও ক্রসিং যদি ধরি, সেখানে তিন লাখ লোক প্রতিদিন পারাপার হয়। যদিও সেখানে আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং বিশ্বের বিভিন্ন শহরের তুলনায় ঢাকার চিত্র অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের শহর ভালো চলছে অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায়।
ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, এটাও সত্য যে রাজধানীতে ১৯১টি ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে একটি ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বাতি রয়েছে, সেটি হলো গুলশান ক্রসিং। কিন্তু সিগন্যাল বাতি স্থাপন বা লাগানোর বিষয়টি সিটি করপোরেশনের। এটি ট্রাফিকের আওতায় নয়। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দায়ভার কতটুকু সেটিও আপনাদের জানা দরকার। সড়কের যানজট ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চারটি সংস্থা কাজ করে, এরমধ্যে চার ভাগের এক ভাগের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। শুধু আইন প্রয়োগের কাজটি করা হয়।
তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেবল পুলিশ, সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক ও চালকের পক্ষে সম্ভব নয়। সবার আন্তরিক হতে হবে। সবাইকে নিয়ম মানতে হবে, তাহলে সবার সহযোগিতায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে ফুটপাত থেকে হকার তুলে দিচ্ছি। এজন্য অনেকের ফোন পাই। তারা বলে আপনার কি একটুকুও দয়া-মায়া নেই। এটাও কিন্তু বাস্তবতা। তাদের রাখলে সড়কে শৃঙ্খলা থাকছে না, আবার তুলে দিতে হচ্ছে।
ছাত্রদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি প্রত্যাশা করি আপনারা ট্রাফিক সেফটি সম্পর্কে সচেতন হবেন ও অন্যদের সচেতন করবেন।
তিনি আরও বলেন, জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় জাপানে, ভারতে ও দেশে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখন আমাদের আন্দোলন অসত্য, চাঁদাবাজি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে।
অনুষ্ঠানে ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম, যানজট নিরসনে ভূমিকা এবং ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান, চেয়ারপারসন হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ঢাকা রোড সেফটি প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. মুনিবুর রহমান, প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) ঢাকা রোড সেফটি প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং জাইকা বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইয়ামি ওকাযাকি।
কালের আলো/বিএস/এমএম