কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি দেখছেন না ডিএমপি কমিশনার
প্রকাশিতঃ 7:07 pm | April 27, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জনগণ সোচ্চার হলে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা গ্রহণ করা হয় এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে কিশোর সংশোধনারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ পুলিশের কাজ নয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনসাধারণের কাজ।
শনিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ডিএমটি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আজকের কিশোর আগামী দিনের যুবক। তারাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে।’
তিনি বলেন, ‘৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সি কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি ‘কিশোর গ্যাং’। কিন্তু কিশোর, তরুণরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এজন্য তাদেরকে নিয়ে আমি ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ বলতে চাই না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে ওসিরা এ বিষয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও পুলিশ সদস্যরা কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আসল কাজ হবে পরিবার থেকে। পরিবার থেকে মা-বাবা, বড় ভাইবোন এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক।’
মোবাইলের দুটি দিক উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। একটি মোবাইল একটি লাইব্রেরি, একটি জ্ঞান ভাণ্ডার। মোবাইলের পজিটিভ দিক শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবহার করে সেই শিক্ষাটা অভিভাবকদের দিতে হবে।’
খেলাধুলার জায়গার সংকট তুলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।’
কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যারা কিশোর গ্যাংয়ের মদতদাতা রয়েছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের যে অদ্ভুত অদ্ভুত নাম রয়েছে তাও তালিকা করা হয়েছে।’
তবে যারা মদতদাতা গডফাদার তারা ওইভাবে গডফাদার নয় উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছেন বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ৫০টি থানা এলাকার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ বেশি লক্ষ্য করা যায়।’
টিকটকে অশ্লীল কন্টেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই নেতিবাচক। ইতোমধ্যে এমন টিকটকারদের আইনের আওতায় এনেছে আমাদের সাইবার টিম। পুলিশের সাইবার টিমের পক্ষ থেকে বিটিআরসির কাছে বিভিন্ন কনটেন্টের তালিকা দেওয়া হয় নিয়মিত।’
গণমাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কাউন্সিলরদের নাম এসেছে। এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কাউন্সিলরদের কিছু অনুসারী রয়েছে যাদের ১৮ বছরের ওপরে বয়স। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিলর কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলরদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন তারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এ কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় কাজ করেন। বেশিরভাগ কিশোরের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আইনের আওতায় পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক উপনেতা-পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানোও হচ্ছে।’
সমাজে ভদ্রলোকের সংখ্যা অনেক বেশি জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ভদ্রলোক মনে করেন থানায় অভিযোগ দিতে গেলে বিপদে পড়বেন এজন্য সেই ভয়ে তিনি থানায় যান না। এটি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিক। যারা সমাজের ভালো মানুষ, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন তবে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যায়। আমি সেটির আহ্বান জানাই। সমাজে ভালো মানুষ যারা তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
কালের আলো/বিএস/এমএম