আজান-কেরাতে পুলিশের শ্রেষ্ঠত্বের জয়ধ্বনি, ধর্মীয় চর্চার অনুশীলনে গুরুত্ব আইজিপির
প্রকাশিতঃ 10:30 pm | March 29, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
হৃদয় আলোকিত করা আজান-কেরাতের সুর। দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের বিজয়ী প্রতিযোগীদের শ্রেষ্ঠত্বের জয়ধ্বনি। সুউচ্চ, সুমধুর ও সুললিত কণ্ঠস্বরে তাদের পদচারণ তখন শান্তির কাননে। এমন সুমধুর কলতান শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ববহ।ইসলামি সমাজের বড়ত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের এ বিশেষ দিকটি শুক্রবার (২৯ মার্চ) বাদ জুমা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পবিত্র মাহে রমজানে তৈরি করলো নতুন ভাব-আবেগের।
চলতি বছরে বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের মাঝে জ্ঞান ও ধর্মীয় চর্চার অনুশীলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি জানিয়েছেন, এরই অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার অনিন্দ্যসুন্দর এই আয়োজনে বিজয়ী থেকে শুরু করে সব প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। একজন ভালো মুসলমানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি এই মর্মবাণীও উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় সকল পুলিশ ইউনিট থেকে পুলিশ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছেন।
আইজিপি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহবান জানান। তিনি আজান ও কেরাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণেরও ঘোষণা দেন। এছাড়া, বিজয়ীদের মেধার স্বীকৃতি হিসেবে তাদেরকে দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোঃ কামরুল আহসান। এ সময় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে প্রতিযোগিতার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করায় বিচারকগণকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা এবার বিজয়ী হতে পারেননি তাদেরকে আগামীতে আরও ভাল করার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।’
পরে আইজিপি বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও পুরস্কার তুলে দেন। প্রতিযোগিতায় আজানে প্রথম হয়েছেন ডিএমপির কনস্টেবল সাগর হোসেন সাব্বির, দ্বিতীয় ৩ এপিবিএন, শিরোমনি, খুলনার নায়েক আবু মুসা এবং তৃতীয় হয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এএসআই (সশস্ত্র) মোঃ ওমর ফারুক।
কেরাতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ৩ এপিবিএন, শিরোমনি, খুলনার নায়েক আবু মুসা, দ্বিতীয় হয়েছেন আরআরএফ, খুলনার কনস্টেবল মোঃ ইসমাঈল হোসেন মুন্না এবং তৃতীয় হয়েছেন র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের কনস্টেবল বেলাল আহমদ।
‘বৈশ্বক শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ঢাকার উচ্চমান সহকারী শেখ রেজাউল কবীর, দ্বিতীয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এসআই (নিরস্ত্র) শামীম আল মামুন এবং তৃতীয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নায়েক এ কে এম খালিদ সাইফুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোঃ কামরুল আহসান বলেন, ‘মাননীয় আইজিপির নির্দেশে আমরা সারাদেশে এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছি। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে বাছাইকৃত পুলিশ সদস্যরা ঢাকায় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আমি যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের সকলকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রতিযোগীসহ যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বাড়তি ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের হয়রানি করলেই কঠোর ব্যবস্থা
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহন বা ট্রেনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে হয়রানির চেষ্টা করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশপ্রধান।
আইজিপি বলেন, ঈদযাত্রায় যদি কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করলে প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে সহায়তা নেওয়ার আহ্বান করছি। আইজিপি বলেন, সম্মানিত যাত্রী সাধারণকে অনুরোধ করবো আপনারা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করবেন না। আমরা বেশ কিছুদিন আগেও সমন্বয় সভা করেছি৷ আগামী ১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পুলিশের সব ইউনিটকে নিয়ে একটি সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। এসব সভার মাধ্যমে আমরা সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিচ্ছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন রেঞ্জ ডিআইজিদের আমরা ব্রিফ করবো। ডিএমপি কমিশনার ঢাকা মহানগরীর সমন্বয় করবেন। ঈদ যাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নৌ-পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশও তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এবার ঈদের ছুটি একটু লম্বা হবে। এজন্য পর্যটন স্পর্টগুলোতে দর্শনার্থীদের একটু ভিড় হতে পারে। তাই সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমরা আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। আইজিপি বলেন, সরকার বহুমুখী উন্নয়ন করছে, রাস্তা অনেক প্রশস্ত হয়েছে। উদাহরণে বলা যায়, চন্দ্রায় মাত্র একটি সড়ক ছিল। এখন রাস্তাও অনেক প্রশস্ত হয়েছে আবার ডাইভারশনও হয়েছে। সারাদেশের সড়ক ব্যবস্থাই অনেক উন্নত হয়েছে। এসব কারণে আমি আশা করছি, আমাদের ঈদ যাত্রী সাধারণকে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। সে সঙ্গে যথা সময় সবার ঈদ যাত্র সমাপ্ত হবে বলে আমি আশা করছি।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছর যেভাবে আমরা সফলভাবে যাত্রীদের নিরাপদে গমনে সচেষ্ট ছিলাম, এবারও আমরা যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করবো। প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ছুটি বাদ দিয়ে হলেও ঈদ যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত কাজ করবে।
কালের আলো/এমএএএমকে