৫৭০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করবে নয়ন, দৃষ্টান্ত বলছে ভোক্তা অধিদপ্তর

প্রকাশিতঃ 6:48 pm | March 17, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামী পাঁচ দিন প্রতি কেজি গরুর মাংস (হাড়, চর্বি, কলিজা ও মাথার মাংসসহ) ৫৭০ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন পুরান ঢাকার কসাইটুলির মাংস বিক্রেতা নয়ন আহমেদ।

রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তার মাংসের দোকান পরিদর্শনে গেলে তিনি এ ঘোষণা দেন।

আর বিক্রেতার এ উদ্যোগকে দৃষ্টান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচারক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

নয়নের মাংসের দোকানটি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কসাইটুলির আহমেদ বাওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে অবস্থিত। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা যখন ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন, তখন নয়ন আহমেদ প্রতি কেজি গরুর মাংস (মিক্স) ৫৮০ টাকায় এবং সাধারণ মাংস ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। নতুন করে তিনি আগামী পাঁচ দিনের জন্য প্রতি কেজি মিক্স গরুর মাংস আরও ১০ টাকা কমিয়ে ৫৭০ টাকা দরে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

নয়ন আহমেদ বলেন, আজ থেকে আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত মিক্স গরুর মাংস আরও ১০ টাকা করে কমিয়ে বিক্রি করব। অর্থাৎ আগামী পাঁচ দিন ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী এম এ মান্নান বলেন, ঐতিহ্যবাহী কসাইটুলির কৃতি সন্তান নয়ন খাসি ও গরুর সাপ্লাইয়ার। তার বাবা, দাদা এবং আমার বাবা একসঙ্গে মাংস ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি (নয়ন) দীর্ঘদিন ধরে মানবসেবা হিসেবে কম টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন। তিনি মিক্স গরুর মাংস ৫৮০ টাকা কেজি ও ঝুলানো মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিনি আমাদের কসাইটুলির গর্ব। তিনি জনগণকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গরুর মাংস দিচ্ছেন। এ জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।

গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকায়ও নামানো সম্ভব
বর্তমান প্রেক্ষাপটে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আমরা যদি চামড়ার প্রকৃত দাম দিতে পারি, পথে পথে যেসব অনিয়ম হয় সেগুলো দূর করতে পারি, গো-খাদ্যের দাম কমাতে পারি, গ্রামের অপ্রতিষ্ঠিত হাটের হাসিল কমাতে পারি, তাহলে ৫০০ টাকায়ও গরুর মাংস খাওয়ানো সম্ভব। আশপাশের দেশের (প্রতিবেশী দেশ) গরুর মাংসের দাম ৪০০ টাকার ঘরেও নামানো সম্ভব।

গরুর মাংসের দাম কমলে মাছ, মুরগি ও ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে জানিয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, কারণ গরুর মাংস প্রোটিনের একটি বড় সোর্স। এটির দাম কমলে ব্রয়লার মুরগি, মাছ ও ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এজন্য এ বিষয়ে আরও নজর দেওয়া দরকার।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্ধারণ করা দামে ২৯টি পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখলাম, যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা কিছু আইনের মধ্যে চলি। বাজার মনিটরিং বা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজের একটি অংশ মাত্র। এরপরও আমরা সারা বছর বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছি। গতকালও আমরা সারা দেশে বাজার মনিটরিং করে ১৫২টি বাজারে সাড়ে সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এখন ফলাফল পেতে নিশ্চই একটু সময় লাগবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরগুলো কাজ করছে। আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। তবে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের পর কিছু পণ্যের দাম ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে।

এর আগে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পুরান ঢাকার কসাইটুলির গর্ব নয়ন দেখিয়ে দিয়েছেন গরুর মাংস ৫৮০ টাকায় বিক্রি করা যায়। উনি আজকে ঘোষণা দিয়েছেন আরও ১০ টাকা কমিয়ে ৫৭০ টাকায় মিক্স মাংস বিক্রি করবেন। নয়ন যা দেখিয়েছেন, এটি দৃষ্টান্ত। এ দৃষ্টান্ত বড় ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জও। এতে বড় ব্যবসায়ী করপোরেট গ্রুপগুলোর উৎসাহী হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, দেশে এখনো কোথায় গরুর মাংসের দাম ৮০০, কোথাও ৭৫০, কোথাও ৭০০ টাকা। নয়ন, খলিল, উজ্জ্বলরা যদি কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে পারেন, তাহলে কেন বেশি দাম? ব্যবসায়ীরা মাংসের বেশি দামের কিছু কারণ বলে। সেই কারণগুলো থাকার পরও কিন্তু নয়ন-খলিল-উজ্জ্বলরা কম দামে মাংস বিক্রি করছেন। অন্যরা যে সোর্স থেকে গরু আনে, নয়নরাও একই সোর্স থেকে আনে। এর মানে চেষ্টা করলে কম দামেও গরুর মাংস বিক্রি করা যায়। নয়নরা পারে।

এ সময় তিনি নয়নদের মতো অন্য ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাহলে আমাদের দ্রব্যমূল্য নিয়ে এত অভিযান, এত মনিটরিং, এত কথাবার্তা, এত টক শো, এত আলোচনা করার প্রয়োজন হয় না।

নয়ন-খলিল-উজ্জ্বলদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, যারা বেশি দামে মাংস বিক্রি করছেন, তারা অনেক সময় নয়ন, খলিলদের ওপর চাপ তৈরি করছে। রাজশাহীতে একজনকে এ কারণে খুন করা হয়েছে। খলিলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নয়নরা কিন্তু নিরাপদ নয়। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে বলবো, নয়নদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে। তাদের যদি কেউ হুমকি দেয়, সেই হুমকিদাতা যেন বাইরে না থাকে। হুমকি যে দেবে তিনি ভেতরে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আমরা এটা দেখতে চাই।

কালের আলো/ডিএস/এমএম