সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা চান দীপু মনি, গণমাধ্যমকে পূর্ণাঙ্গভাবে সহায়তার অঙ্গীকার তথ্য প্রতিমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 10:31 pm | March 01, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
জমকালো আয়োজনে অভিষিক্ত হয়েছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের চলতি বছরের কার্যকরী কমিটির নব নির্বাচিত নেতৃত্ব। পাশপাশি সংবর্ধিত করা হয়েছে মেঘনা পাড়ের সন্তান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুলকে। শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বর্ণিল এ অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। উদ্বোধক ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আমরা চাই বস্তুনিষ্ঠতা : সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা: দীপু মনি
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ইতিবাচকতা প্রত্যাশা করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক সময় নিরপেক্ষতার কথা বলে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাই এবং কখনো কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি। হত্যাকারী এবং যিনি হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার কোন প্রশ্ন নেই। সেখানে প্রশ্নটা হল মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধী, গণতন্ত্র আর স্বৈরাচারের মধ্যে। গণতন্ত্রহীনতা জনবিচ্ছিন্নতা অধিকার কেড়ে নেওয়া তারমধ্যে সেখানে কিন্তু নিরপেক্ষতার জায়গা নেই। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতেই হবে।সেই কাজটি যেন আমরা নির্ভীকভাবে করতে পারি সাংবাদিকদের কাছে এটাই প্রত্যাশা।’
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির জমকালো অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী ‘বলেন, সাংবাদিকতার পেশা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোন পেশাই কোন কাজেই সততার সাথে করে যাওয়া সহজ নয়। সত্যের পথ সব সময়ই কঠিন। রবি ঠাকুরের কথা -‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম সে কখনো করে না বঞ্চনা।’ সেই বিশ্বাস নিয়ে এগুতে হয়। এই বোধ নিয়ে আমরা সত্যের পথে থাকবো।’
সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি’র বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কর্মাধ্যক্ষ। ফলত সাংবাদিক পরিবারের এ সন্তান স্বভাবতই বলেন, ‘প্রেসক্লাব আমার খুব আপন জায়গা। ইত্তেফাক পত্রিকার প্রেসের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে আমি বড় হয়েছি। ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আমার বাবা জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করেছেন। আমার বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদকে দেশের মানুষ ইত্তেফাক এবং ছাত্রলীগ হিসেবেই চিনেন। এজন্য সাংবাদিকতার জায়গাটা আমার প্রাণের জায়গা। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাথে আমার সম্পর্কটা আরও বেশি নিবিড়। আমার রাজনীতি এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার সেই শুরু থেকে এখানকার সাংবাদিকদের সাথে আমার সম্পর্ক অটুট রয়েছে। আশা করি আগামী দিনও থাকবে ইনশাল্লাহ।’
অভিষেক অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, মনজুরুল আহসান বুলবুল, জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক বশির আহমেদ, জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওছমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল ও দৈনিক যুগান্তরের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার।
সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও ৬বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুল।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন ও সাবেক সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহ’র যৌথ পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত। শুভেচ্ছা ও বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি – কাজী শাহাদাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা প্রমুখ। জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী মোঃ মানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সরকার গণমাধ্যমকে পূর্ণাঙ্গভাবে সকল সহায়তা দিতে প্রস্তুত : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
সরকার গণমাধ্যমকে পূর্ণাঙ্গভাবে সকল সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম এখন শিল্প। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিকাশ ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণতা পাবে না। এরকম বাস্তবতায় সরকার গণমাধ্যমকে পূর্ণাঙ্গভাবে সকল সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী অবস্থায় মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সরকার প্রস্তুত। সে ক্ষেত্রে সরকার সাংবাদিকদের কাছ থেকে একই ধরণের সহযোগিতা চায়।’
শুক্রবার (০১ মার্চ) বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে প্রেসক্লাবের চলতি বছরের কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি গণমাধ্যমের বিষয়ে সরকারের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও টিভি টুডে-এর প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটোয়ারী, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বশির আহমেদ, দৈনিক যুগান্তরের যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুলকে অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গণমাধ্যম ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যম শিল্পকে আরও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য আমরা চেষ্টা করতে পারি। গণমাধ্যম কীভাবে সরকার বা কর্তৃপক্ষের জন্য সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে জবাবদিহি আনতে পারে, এমনকি সমালোচনা করতে পারে, সে কাজগুলোও আমরা করতে পারি।
তিনি আরও জানান, পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে সাংবাদিকতায় শৃঙ্খলা আনার একটি দাবি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সাংবাদিকতাকে এভাবে উন্মুক্ত ও অবারিত করেছেন, এমনভাবে স্বাধীনতা দিয়েছেন সেটা নিয়ন্ত্রণের কথা এখন সাংবাদিকরাই বলছেন। সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। তবে যে কোনো পেশায় কিছু অপেশাদার মানুষ চলে আসে। সেসব ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু শৃঙ্খলা আনার প্রয়োজন আছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করে। গণমাধ্যম সেক্টরে সরকার যা কিছু করবে তা এর সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে করবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘গণমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক দিক আছে। বাণিজ্যিক দিক থেকে লাভবান করা না গেলে গণমাধ্যম অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। এজন্য কোন গণমাধ্যমকে আমরা যদি সরকারি বিজ্ঞাপন বা ক্রোড়পত্রের উপর নির্ভরশীল করতে চাই, তাহলে সেটি দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকা মুশকিল হবে। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে আরও উদ্ভাবনী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, সৃজনশীলতা আনতে হবে কীভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছানো যায়, কিভাবে সফল হওয়া যায়।’
এ সময় তিনি আরও যোগ করেন সাংবাদিকদের সাথে নিয়েই সরকার গুজব ও অপতথ্যকে মোকাবিলা করতে চায়। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জরুরি। তবে অপতথ্য ও গুজবের বিস্তার গণতন্ত্রকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তেমনি গণমাধ্যম ও পেশাদার সাংবাদিকতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে যদি কোনো গোষ্ঠী অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে, সেটি গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের অপতৎপরতাকে জবাবদিহির আওতায় আনা নিশ্চিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার এটাও বিশ্বাস করে, যারা যুদ্ধাপরাধী, মুক্তযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি, জঙ্গি, উগ্রবাদী তাদের একটা জায়গায় রেখে গণতন্ত্র কখনোই সফল হয় না। এ জন্য সরকারের অবস্থান উগ্রবাদের বিপক্ষে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিপক্ষে, মৌলবাদের বিপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে যারা তাদের বিপক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, নির্বাচনের পক্ষে। সে জায়গায় গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ, সরকার-সবার মধ্যে ঐকমত্য আছে।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম