প্রিয়দর্শিনী মৌসুমীর ‘অন্যরকম’ জন্মদিন আজ

প্রকাশিতঃ 10:48 am | November 03, 2023

বিনোদন প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশীয় চলচ্চিত্রের ‘প্রিয়দর্শিনী’ খ্যাত অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমী। নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা পরিচালনা ও গায়িকা হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। তবে নিজেকে তিনি কেবলমাত্র একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এই তারকা শুরু থেকেই বলে আসছেন, ‘বড় নয়; ভালো অভিনেত্রী হতে চাই।’ ঢাকাই সিনেমায় কয়েক দশক ধরে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে অনেক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি। ঢাকাই সিনেমার উজ্জ্বল এই তারকার জন্মদিন আজ। পঞ্চাশ বসন্ত পেরিয়ে আজ তিনি পা রাখলেন একান্নতম বছরে। ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন এই তারকা।

ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছোঁয়ার আগে থেকেই সোশ্যালে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করে দিয়েছেন ভক্ত অনুরাগী ও সহকর্মীরা। প্রতিবারই তার জন্মদিন ঘিরে নানা আয়োজন থাকে। বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাকে চমকে দেন তার স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী।

কিন্তু এবার তেমনটি হচ্ছে না। মৌসুমীর স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী জানান, এবারের জন্মদিনে দেশে নেই মৌসুমী। মেয়ে ফাইজার পড়াশোনার জন্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি। তাই এবার নিজের মা-ভাই ও মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে জন্মদিন উদযাপন করছেন মৌসুমী।

মৌসুমী দেশে না থাকায় সেভাবে জন্মদিন উদযাপনের কোনো আয়োজন না থাকলেও মৌসুমীর স্বামী নায়ক ওমর সানী জানান, তার আয়োজনে কিছু কাছের মানুষ নিয়ে ‘চাপওয়ালা’য় ছোট্ট আয়োজন থাকতে পারে।

এদিকে মায়ের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মৌসুমী বলেন, ‘যে কোনো কারণেই হোক আল্লাহ এই সময়টাতে আমাকে যুক্তরাষ্ট্র থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি কিছুদিন আগেই ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসি। এখানে এসে একটি শো’তে অংশগ্রহণ করি। বর্তমানে মা, ভাইবোনের সঙ্গেই আছি আটলান্টায়। ভাইবোনদের সঙ্গে থাকলে যা হয় আর কী। হয়ত ওরাই নিজেরা নিজেরা কিছু প্ল্যান করছে, যা আমি জানি না। তবে আমার ভালোলাগা এটাই যে, আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি, ভাইবোনের সঙ্গে আছি। সঙ্গে আমার মেয়েও আছে। হ্যাঁ, এটাও সত্যি, সানীকে খুব মিস করছি, আমার ছেলে ফারদিনকেও অনেক মিস করছি। ওরা যে আমার এই দিনটিতে আমাকে মিস করবে- এটা আমি অনুভব করতে পারি। এরপরও সবতো আল্লাহর ইচ্ছা। সবাই শুধু দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমাদের ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। আর আমার ভক্ত দর্শকের কাছে দোয়া চাই যেন, আমি সময় মতো ঠিকঠাকভাবে দেশে ফিরতে পারি। সংবাদমাধ্যমের সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।’

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে মৌসুমী শেষ করেছেন ‘সোনার চর’ সিনেমার ডাবিংয়ের কাজ। এই অভিনেত্রীর সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি সিনেমা হচ্ছে- আশুতোষ সুজনের ‘দেশান্তর’ ও মিজায় সাখাওয়াত হোসেন পরিচালিত ‘ভাঙন’। সম্প্রতি তিনি তোহা মোরশেদের পরিচালনায় একটি তেলের বিজ্ঞাপনেও মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। প্রয়াত সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ। অভিনয়ের পথচলার ২৫ বছরে মৌসুমী অনেক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। পেয়েছেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আবার মৌসুমী নিজেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

মৌসুমী বলেন, ‘আজ ভীষণভাবে মনে পড়ছে আব্বুর কথা। মনে পড়ছে আমার প্রথম চলচ্চিত্রের হিরো সালমানের এবং মান্না ভাইয়ের কথা। কৃতজ্ঞ ফটোগ্রাফার চঞ্চল মাহমুদ ভাইয়ের কাছে; যার ক্যামেরা দিয়ে আমাকে প্রথম দেখেন এবং পরে রফিকুর রহমান রেকু ভাইয়ের কথা। কৃতজ্ঞ ক্যাসেন্ড্রা লিমিটেডের প্রধান শাকিব লোহানী, পরিচালক সোহান ভাই, যাদের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি প্রয়াত শ্রদ্ধেয় চাষী ভাই, নারগিস আপা এবং রাজ’র প্রতি। কৃতজ্ঞ পাঠকপ্রিয় ম্যাগাজিন আনন্দ বিচিত্রা, সিনেমা, প্রিয়জন, চিত্রালী এবং সাংবাদিক বড় ভাই প্রয়াত শ্রদ্ধেয় আওলাদ ভাই। আমার মা, দুই বোন ইরিন, স্নিগ্ধা আমার পাশে থেকেছে সবসময়। আর যে মানুষটির ভালোবাসায় এবং সহযোগিতায় আমি পরিপূর্ণ, তিনি আমার সব সুখ-দুঃখের সাথী আমার স্বামী ওমর সানী।’

খুলনার মেয়ে মৌসুমীর পুরো নাম আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী। বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি এবং মায়ের নাম শামীমা আখতার জামান। নব্বইয়ের শুরুর দিকে ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু করেন।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক তার। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন, ঠাঁই করে নেন দর্শক হৃদয়ে। এরপর দোলা, অন্তরে অন্তরে, দেনমোহর ও স্নেহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

দুই যুগেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালকের খাতায়ও নাম লিখিয়েছেন মৌসুমী। ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে পরিচালনা করেন ‘মেহের নিগার’। ২০১৬ সালে ‘শূন্য হৃদয়’ নামে একটি টেলিফিল্মও পরিচালনা করেন।

পরিচালনার পর প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন মৌসুমী। ১৯৯৬ সালে ‘গরিবের রানী’ সিনেমা দিয়ে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান। চলচ্চিত্র প্রযোজনার লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কপোতাক্ষ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে মুশফিকুর রহমান গুলজারের পরিচালনায় ‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’ ও মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালনায় ‘বউয়ের সম্মান’ সিনেমা প্রযোজনা করেন তিনি। এরপর দীর্ঘ অনেক বছর পর প্রযোজনা করেন ‘আমি এতিম হতে চাই’। চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন মৌসুমী ও ঋদ্দি টকিজ।

অসহায় মানুষদের সহায়তায় মৌসুমী গড়ে তুলেছেন ‘মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। অভিনয়ের বাইরে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে।

মৌসুমী তার অভিনীত সিনেমা ‘মেঘলা আকাশ’, ‘তারকাটা’ এবং ‘দেবদাস’ এর জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়াও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ৬ বার, পেয়েছেন মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email