তীব্র দাবদাহ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করণীয়
প্রকাশিতঃ 5:17 pm | June 04, 2023

সুলতানা রাজিয়া :
দাবদাহ বা তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে গরম। ঘরে কিংবা বাইরে অসহনীয় হয়ে উঠেছে তাপমাত্রা। তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে মানুষ, ওষ্ঠাগত হয়েছে মানুষ ও প্রাণীর প্রাণ।
গরমের এমন দশা যে, ফ্যানের নিচেও ঘামতে হয়। পুকুরের পানি আর বাসার ছাদের ট্যাংকির পানি পর্যন্ত গরম ছিল। এমনকি ঘরের খাবার পানি গরম হয়ে যায়। দাবদাহে প্রায় সব বয়সের মানুষেরই নাকাল অবস্থা। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। খেটে খাওয়া মানুষেরও ত্রাহিদশা। এই গরমে ডায়রিয়া-আমাশয়-জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তীব্র খরতাপ অব্যাহত থাকতে পারে আরও কিছু দিন। এদিকে আকাশে মেঘের আনাগোনার কোনো পূর্বাভাস নেই। ফলে বৃষ্টিশূন্য দিন আরও প্রলম্বিত হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে তাপমাত্রা। ফলে গরমের প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমতাবস্থায় বিপদে অন্যান্যদের মতো বিপদে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অবস্থা খুবই নাজুক। গরমের সাথে বেড়েছে লোডশেডিং ফলে এ অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামে শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫–৮ জুন বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
কিন্তু অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে খোলা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টসহ অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি নেওয়া যেতে পারে যে-সব ব্যবস্থা-
১. শিক্ষার্থীদের ছাতা দিয়ে পাঠানো, এতে রাস্তায় গরমের থেকে রক্ষা পাবে।
২. শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পানের ব্যবস্থা করতে করতে হবে। এ জন্য বাসা থেকে বোতলে পানি দিয়ে দেওয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩. স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের পর বাসায় ফিরলে স্যালাইনের ব্যবস্থা করা।
৪. খাবারে পরিবর্তন আনা। মাংস এড়িয়ে বেশি করে ফল ও সবজি খাবারের ব্যবস্থা করা।
৫. শিক্ষার্থীরা যাতে গরমে রোদে খেলাধুলা না করে সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে গরমের তীব্রতা কমার আগ পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বা মাঠে কোন কিছুর আয়োজন না করা।
৬. ক্লাসরুমের দরজা ও জানালা খোলা রাখা; যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ইলেকট্রিক ফ্যান থাকলে তা চালু রাখা ও লোড শেডিংয়ের সময় হাতপাখার ব্যবস্থা করা।
৭. গরমের সময় বেশি ঠান্ডা পানি যাতে না পান করে বা বেশি গোসল যাতে না করতে পারে এ জন্য অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।
৮. গরমের তীব্রতা কমার আগ পর্যন্ত ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভোর থেকে ক্লাস শুরু করে দুপুরের আগেই শেষ করা যেতে পারে।
এসবের বাহিরে বর্তমানে দেশে গরমের পাশাপাশি লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ার বিকল্প উপায়ে ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে করোনাকালীন সময়ের মতো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে বিদ্যুতের সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি দাবদাহ থেকে রক্ষা পাবে শিক্ষার্থীরা।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, হাজী মাদবর আলী হাচানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ভাটারা, ঢাকা।