শেরপুরে লাম্পি স্কিন রোগে মারা যাচ্ছে গরু

প্রকাশিতঃ 10:32 pm | May 20, 2023

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি, কালের আলো:

শেরপুরে ‘লাম্পি স্কিন’ নামে ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারু পাড়ায় বাড়ি শাহজাহানের। সরকারি চিকিৎসকের ব্যবস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ডাক্তার আইলে ভিজিট এক হাজার ট্যাহার কম নেয় না। আর মংগা (দামি) বড়ি লেইক্কে (লিখে) দে। আমরা ত গরিব মানুষ, অতো ট্যাহা ভিজিট দিবার পাই না। তাই সরকারি ডাক্তার আহেনা।

সরেজমিন গিয়ে আরও জানা যায়, আন্ধারু পাড়ার রুবেল মিয়া (৩২) দিনমজুর। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটি বাছুর কিনেছিলেন দেড় বছর আগে। হঠাৎ গত সপ্তাহে সেই গরুটির লাম্পি স্ক্রিন রোগ দেখা দেয়। এখন মাটিতে একেবারে পড়ে গেছে। অবস্থাও আশঙ্কাজনক। খবর দিয়েও সরকারি চিকিৎসকের দেখা মেলেনি তার। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ভিজিট চায় ডাক্তারের সহকারীরা। আর সরকারি ডাক্তার এলাকায় জীবনেও পা রাখে না। আমি যোগাযোগ করেছি, আসেনি। পরে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে ব্যবস্থা করাইতেছি, এখন হাল ছেড়ে দিছি।

এই এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরকারি চিকিৎসককে তারা চেনেনই না। এ এলাকায় ছয় মাসেও কেউ পা রাখেনি। যাও দু-একজন সহকারী আসেন, তাদের দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সরকারি হাসপাতালেও ভিজিট ছাড়া নড়েন না চিকিৎসক। কৃষকরা আরও বলেন, যদি সরকারি চিকিৎসক এখানে এসে এ রোগ সম্পর্কে সভা-সেমিনার করত, তাহলে আমরা সব জানতে পারতাম। ক্ষতিটাও কম হতো।

তিনি বলেন, আমার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। এত বড় গরুটি মারা গেছে। সরকারি চিকিৎসাসেবার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আপনিই এডা ফোন দেন, আগে ট্যাহা ফুরাবে। তাই কম টাকা দিয়ে পল্লী চিকিৎসকের সেবাই নিচ্ছি।।

নালিতাবাড়ীর পাহাড়ি এলাকা দাউদরা। ছোট্ট একটি খামার দিয়ে আশার স্বপ্ন বুনছেন সেখানকার রহমত আলীর ছেলে এরশাদ আলী। গেল সপ্তাহে তার খামারের বড় গরুটি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গরুটির দাম এক লাখ টাকার ওপরে ছিল বলে জানান তিনি। পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুনারপাড়া গ্রামের আবু হানিফের ৪০ হাজার টাকা মূল্যের গরু গত ১২ মে মারা গেছে।

৮ মে নয়াবিল ইউনিয়নের দাওয়াকুড়া গ্রামের কৃষক আবু সাইদের প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বকনা বাছুর মারা গেছে। এর আগে ৩ মে একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই গ্রামের কৃষক আবদুল মতিনের প্রায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাভিন গরু ও আন্ধারু পাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান মানিকের প্রায় ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় বাছুর মারা যায়। দিন দিন এই রোগটি উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন কৃষক ও খামারিরা। তারা এ রোগ প্রতিরোধে জরুরিভিত্তিতে আক্রান্ত এলাকার গবাদিপশুদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের দাবি জানান।

এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, দেশের অনেক জেলার মতো শেরপুরেও সম্প্রতি লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। মূলত রোগটি মশা, মাছি, আক্রান্ত পশুর ব্যবহৃত নিডল ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে গরু থেকে গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত গরুকে অবশ‍্যই কোয়ারেন্টিন করে চিকিৎসা নিতে হবে।

এদিকে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে টিম গঠনের মাধ্যমে নালিতাবাড়ী উপজেলায় লাম্পি স্ক্রিন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর কারও বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের আলো/আরএ/এমএইচ

Print Friendly, PDF & Email