দৃঢ় সংকল্প আর জেদ থেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘জয়’

প্রকাশিতঃ 10:45 am | April 03, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নে শর্টকার্ট নেই তাঁর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা দু’সরকারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর পর পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন জাহিদ মালেক। প্রতিকূল সময়েও ধৈর্য্য হারাননি কখনও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন দ্বিগুণ উৎসাহে মনোবল চাঙ্গা করে অসাধ্য সাধন করেছেন। কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প-মন্ত্রীত্বে তাঁর সফলতা অর্জনের ম্যাজিক।

সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে দেশের জনগণের বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিজের ঘোষিত সময়ে ঠিকই উদ্বোধন করেছেন এই সেবা কার্যক্রমের। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) জেলা পর্যায়ে ১২ টি ও উপজেলা পর্যায়ে ৩৯ টি হাসপাতালে সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনের মাধ্যমে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জেই উত্তীর্ণ হয়েছেন মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

শুরুতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও অশ্চিয়তা থাকলেও দেশের স্বাস্থ্য সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করতে তাঁর এই নিউ কনসেপ্ট বাস্তবায়নে তিনি শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় অনেক সমালোচনার পরেও সব ছাপিয়ে সফল হয়েছিলেন। সেই সফলতা অর্জনের গল্প থেকেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বারের সিদ্ধান্তেও আশাবাদী ছিলেন মন্ত্রী।

প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে স্বাস্থ্য সেবার নতুন অধ্যায়েও জেদ থেকেই বিজয়ের হাসি হেসেছেন জাহিদ মালেক। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোর আলোচক থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতন নেটিজেনরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। মূলত ‘টিম ওয়ার্ক’র মাধ্যমে জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তৃণমূলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে আরও একবার সাফল্যের মুখ দেখেছে।

জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে অফিসের সময়ের পর বিকেলের শিফটে রোগীদের সেবা দেওয়ার কনসেপ্টটিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সরকারি হাসপাতালে চেম্বারের ভাবনা নিয়ে প্রথম যখন কথা বলেন তখন অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ দোটানার মাঝে ছিলেন।

অনেকেই ঘোষণা বাস্তবায়নে শঙ্কাও প্রকাশ করেন। আগ বাড়িয়ে কারও কারও ভাষ্য ছিল সমাজের মানুষজন বিষয়টিকে কীভাবে দেখবে? এমন কনসেপ্ট আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব না। রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে ইত্যাকার কথাবার্তায় সমালোচনায় মুখর ছিলেন কেউ কেউ। আবার রোগীদের সেবা নেওয়ার পরিধি বিস্তৃতির উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করেও সাধুবাদ জানান অনেকে।

তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই নিউ কনসেপ্ট বাস্তবায়নে অটল ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে এই সেবা চালু করতে যাবতীয় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নীতিমালা থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল নির্ধারণ করে একটি তালিকা প্রস্তুত করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাঁরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) জেলা পর্যায়ে ১২ টি ও উপজেলা পর্যায়ে ৩৯ টি হাসপাতালে সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর দেখা গেলো চিকিৎসক বা রোগীদের মাঝে কোন দূরত্ব তৈরি হয়নি। উল্টো রোগীরা সেবা নিতে যেমন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তেমনি চিকিৎসকরাও মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সফলে আন্তরিক সদিচ্ছার স্বাক্ষর রেখেছেন। পথিকই যে পথ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও একবার নিজের দূরদর্শীতার মাধ্যমে সেটি বুঝিয়ে দিলেন।

নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতে তিনি নিজেই পুরো কার্যক্রমটি মনিটরিং করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি হোয়াটস আপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবা সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা যুক্ত রয়েছেন। কোথায় কোন সমস্যা হলে সেটি তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানও হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চিকিৎসক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ কথা বলেন। চিকিৎসকদের উৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ওপরই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নির্ভর করে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই সেবা প্রাপ্তিটি ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনেকদিনের ইচ্ছা। আজ তাঁর নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারলাম। আজ সেটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। লক্ষ্য রাখবেন এই উদ্যোগ যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই বলেছেন, সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। এখন আমাদের লক্ষ্য মানুষকে উন্নত সেবা দেওয়া।’

সেদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘এই সেবার মাধ্যমে জনগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা নিজ কর্মক্ষেত্রেই প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কনসালটেন্টরা রোগী দেখবেন, যদি রোগীর কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার হয় তা করবেন। এই সেবার জন্য চার্জ রয়েছে। তাদের সহযোগিতার জন্য নার্স, টেকনিশিয়ান রয়েছে তারাও সার্ভিস চার্জ পাবেন। এই সেবা চালুর মাধ্যমে সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রোগীরা সরকারি হাসপাতালেই পাবেন।’ চলতি বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে এই বৈকালিক সেবা কার্যক্রম চালু করারও ঘোষণা দেন মন্ত্রী।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম দৈনিক সন্ধানী বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় সব সময় চেষ্টা করেন সবাইকে নিয়ে কাজ করতে। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ তিনি সব বিষয়েই নজর রাখেন এবং কথা বলেন। সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্যোগও যুগান্তকারী। মাননীয় মন্ত্রীর দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আমরা নির্ধারিত সময়েই এই সেবা কার্যক্রম চালু করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি নিজেই সার্বক্ষণিক পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। শুরুতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। আমরা মনে করি এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৃণমূলের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।’

কালের আলো/এমএএএমকে