স্বাধীনতার টেকসই রূপান্তরের দুর্দমনীয় চেতনায় শাণিত করলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম

প্রকাশিতঃ 10:41 pm | March 29, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

রক্ত রাঙা নতুন সূর্য সেদিন উঠেছিল বাংলার আকাশে। বুক পেতে প্রতিরোধ গড়েছিল বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতার তিপ্পান্নতে দাঁড়িয়ে বিশ্বসভায় উজ্জ্বল বাংলাদেশ। নানা দিক থেকে অগ্রগতি বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতারই ফসল। ফলত স্বাধীনতাকে টেকসই আর নিরাপদ করার দুর্দমনীয় চেতনায় সবাইকে শাণিত করলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি।

অমিত দৃঢ়তার উচ্চারণে মন্ত্রী মনে করেন, ‘ষড়যন্ত্র থাকবে তবে সেটি মোকাবেলা করে স্বাধীনতার সুফল জনজীবনে পৌঁছাতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতা অর্জনে যেমনি ৩০ লক্ষ জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে তেমনি রক্ষার জন্যও কম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। পরাধীন জাতি স্বাধীনতার গুরুত্ব সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবে।’

শুধু তাই নয়, সমুদ্র থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিজয়ের চিহ্নই মোটাদাগে উপস্থাপন করলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। নিজের প্রাণবন্ত ও যুক্তিনির্ভর আলোচনায়। ধন্য সেই পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লড়াকু নেতৃত্বে বাঙালির ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার অবসানের সারি সারি চিত্রপট তুলে আনলেন নিজের জবানীতে। বললেন, ‘পরাধীন জাতি হীনমন্যতায় ভোগে, তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নেই এবং কোন লক্ষ্যও নেই। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও হতাশাময় পরাধীনতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো আর শূন্য ভাণ্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল, বিশ্বের বিস্ময়-এসবও বাদ যায়নি মন্ত্রীর চল্লিশ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে। তীব্র দহন যন্ত্রণায় তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেনা শাসন এবং বিএনপি জামাতের সময়কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।’

সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা এবং মাথা উঁচু করে চলার দৃঢ় প্রত্যয়েরও ঘোষণা দিলেন ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়া সরকারের অভিজ্ঞ এই মন্ত্রী। সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘স্বাধীনতাকে নিরাপদ করার চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে, ষড়যন্ত্র এখনো চলেছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র ও বাধাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।’

বুধবার (২৯ মার্চ) জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলনায়তনে চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে সরল, সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্যই উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

স্বাধীনতাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট টেনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, একটি আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দেশের জনগণ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের নেতৃত্বে দাঁড় করিয়েছলেন দেশকে শাসন করার জন্য কিন্তু পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রে আমাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের স্বাধীনতাই এনে দেননি, আমাদের স্বাধীনতাকে শক্ত ভিত্তির উপরও তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন। ভৌগলিক আয়তনের ছোট্ট একটি দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ এক সময় তার বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এই বিশাল জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করেছেন।’

বিএনপি’র সুষ্ঠু নির্বাচনের সজ্ঞা
বিএনপি’র সুষ্ঠু নির্বাচনের সজ্ঞার কথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, ‘বিএনপির কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে যে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিএনপি সেই ব্যবস্থাকেও কলুষিত এবং নিজ স্বার্থে ব্যবহার করার ফলে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়ন চিত্রের সারসংক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ধাপে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে বাংলাদেশ ১৭ হাজার একর এবং ভারত ৭ হাজার একর ভূমি পেয়েছে। অন্যদিকে দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করে মিয়ানমার থেকে এক লক্ষ ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং ভারত থেকে ১৯ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা এখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে বিএনপি দেশকে উপহার দিয়েছে খাদ্য ঘাটতি, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধসহ নানা রকমের জঙ্গি তৎপরতা’ যোগ করেন মন্ত্রী।

প্রাপ্য সম্মানে নিশ্চিত হবে সহাবস্থান
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সাম্প্রতিক সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করা নিয়ে বিতর্কের বিষয়েও বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যে অবস্থানে থাকুন না কেন সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিলে সহাবস্থান নিশ্চিত হবে এবং এতে কোন অসুবিধা নেই। সম্বোধনের নানা স্তর রয়েছে এবং তা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলেই সবার সম্মান অটুট থাকবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বক্তব্য রাখেন।

কালের আলো/এমএএএমকে