নানা আয়োজনে বিজিবির সব ইউনিটে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত

প্রকাশিতঃ 8:54 pm | March 26, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নানা আয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সব ইউনিটে এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে রোববার (২৬ মার্চ) প্রত্যুষে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র সব ইউনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বিজিবি সদর দপ্তরে কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।

এর আগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক অংশগ্রহণ করেন।

বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এদিন ফজর নামাজের পর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদসমূহে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মার শান্তি এবং বিজিবি’র উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পিলখানাস্থ কেন্দ্রীয় মসজিদে বিজিবি মহাপরিচালকসহ বিজিবি’র সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় বিজিবি সদস্যদের মাঝে উন্নতমানের ইফতার ও খাবার পরিবেশন করা হয়।

দেশ ও জাতির কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকায় বিজিবি
দিবসটি উপলক্ষ্যে সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। বিজিবি সদর দপ্তর, পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সকলের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ১৫ই আগস্ট শাহাদতবরণকারী তাঁর পরিবারের সকল সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদ এবং বিজিবি’র ২জন বীরশ্রেষ্ঠসহ আত্মোৎসর্গকারী ৮১৭ জন বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আজ বাঙালি জাতির জন্য একটা গর্বের দিন। আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিজিবি’র মতো ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীর জন্যও দিনটি অত্যন্ত গর্বের। সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই মহান বাণী আপামর জনসাধারণকে জাগ্রত করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা।’

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সবসময়ই অগ্রভাগে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিজিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে-এটাই হোক আজকের দিনের শপথ।

তিনি ব্যক্তি স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে এবং বিজিবি’র সমৃদ্ধি ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জমকালো যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেড
বিজিবি জানায়, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ও আখাউড়া-আগরতলা আইসিপিসমুহে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ’র জমকালো যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেডে বিজিবি-বিএসএফ এর কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং স্থানীয় দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত শিশুদের জন্য বিজিবি জাদুঘর উম্মুক্ত রাখা হয়। সন্ধ্যার পর পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে সীমিত আকারে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

এর আগে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যাকান্ডে নিহত শহীদদের স্মরণ ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে এশার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাত সাড়ে ১০ টা থেকে ১০ টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত ১ মিনিট বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিটে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ কর্মসূচী পালন করা হয়।

কালের আলো/এএইচ/এমকে