ঈর্ষণীয় সাফল্যে ১৯ বছরের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়েও অনন্য র‍্যাব

প্রকাশিতঃ 10:33 pm | March 18, 2023

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটরকালের আলো:

উগ্র জঙ্গিবাদ দমনে সব সময়ই কার্যক্রম ভূমিকা রেখেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সন্ত্রাসবাদ দমনেও রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। জলদস্যু বা চরমপন্থীদের মূলোৎপাটন, মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান কিংবা গুরুতর অপরাধীদে গ্রেফতার সবক্ষেত্রেই অনুকরণীয় এক উদাহরণ এই এলিট ফোর্স। অবৈধ অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধারেও অর্জন করেছে সুনাম।

র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) এম খুরশীদ হোসেনের সুদৃঢ় ও গতিশীল নেতৃত্বে সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধেরও এক নজির স্থাপন করেছেন র‌্যাব ফোর্সেসের সদস্যরা। র‌্যাব ফোর্সেসের সাফল্য আলোড়িত-আন্দোলিত করেছে বীরের জাতি বাঙালিকে।

সতের কোটি বাংলাদেশের হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই ১৯ পেরিয়ে ২০ বছরে পা রেখেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মুঠো মুঠো সাফল্যে উদ্ভাসিত করেছেন নিজেদের। র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার (১৯ মার্চ) র‌্যাব সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ দরবার।
এই দরবারে এবার সশরীরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন।

২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তবে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে রোববার (১৯ মার্চ)। বর্তমানে সারাদেশে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে।

এসব ব্যাটালিয়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গেই। দীর্ঘ পথচলায় দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে এই পর্যন্ত ২৯ জন সদস্যকে হারিয়েছে র‌্যাব। দেশের জন্য তাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আভিযানিক কার্যক্রমে আহত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক র‌্যাব সদস্য।

সূত্র জানায়, গত বছরের শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে অভিষিক্ত হন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এম খুরশীদ হোসেন। দেশের জনগণের সবচেয়ে প্রিয় আস্থাভাজন সংস্থার ডিজি হিসেবেও তিনি নিজের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের সুনাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়নের গতিধারাকে আরও তরান্বিত করতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সমুন্নত রেখে র‌্যাব ফোর্সেসকে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গর্বিত অংশীদার করেই তিনি কাজ করে চলেছেন অবিরাম।

গত বছরের রোববার (০২ অক্টোবর) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাওয়ার সুদৃঢ় প্রত্যয়ের কথা উচ্চারণ করেন ডিজি এম খুরশীদ হোসেন। র‌্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের গত ৬ মাসে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাধ দমনে র‌্যাবের অমর কীর্তিতে নবপ্রাণের সঞ্চার করে র‌্যাব ফোর্সেসের প্রতিটি সদস্যকে উজ্জীবিত-উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি জুগিয়ে চলেছেন অনি:শেষ প্রেরণা ও অসীম সাহস।

এলিফ ফোর্স র‌্যাবের ১৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণেও র‌্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেন সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘এলিট ফোর্স হিসেবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নির্মূলসহ জনমানুষের নিরাপত্তায় র‌্যাব ফোর্সেস সদা জাগ্রত। আমাদের সুদীর্ঘ পথচলায় আপনাদের অব্যাহত সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।’

র‌্যাবের সাফল্যের সারসংক্ষেপ
র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৬ জন সন্ত্রাসী। শুধুমাত্র ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ২৮ হাজার ৩৮৩ জন সন্ত্রাসী। এ সময়ে অস্ত্র সংক্রান্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৬৩১ জন। মোট অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ টি। ম্যাগাজিন ৭০ টি, ৫ হাজার ৯২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৪১ হাজার ৮৭৯ টি বিস্ফোরক ও ৬ দশমিক ১০৯ কেজি বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। মামলা হয়েছে ৪৬৯ টি।

র‌্যাব সশস্ত্র অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও অপরাধ দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। দেশের সন্ত্রাস কবলিত এলাকাসমূহে র‌্যাবের অভিযানের ফলে জনগণ শান্তিতে জীবন যাপন করছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে। এলিট ফোর্স র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপোসহীন এবং নিরলস গ্রেফতার অভিযান চলমান রেখেছে। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের জীবন ও সামাজিক হুমকির কারণ যেন হতে না পারে সেই লক্ষ্যে র‌্যাব সদা তৎপর। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে জমি সংক্রান্ত গ্রেফতার, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাব মোট গ্রেফতার করেছে ২ হাজার ৯২৯ জনকে। একই ঘটনায় গত বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৪ টি অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। ১৮৫ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে জেএমবি সদস্য গ্রেফতার হয়েছে ২৯ জন। জামাতুল আনসারের ৬৮ ও কেনএফ’র ১৭ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৩০ টি। গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে ৫৩৩ রাউন্ড।

প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত ঘটনায় গত ১৯ বছরে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে ৪৫৪ জনকে। এর মধ্যে গত এক বছরে তিনটি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ১৬ জনকে। গত এক বছরে সাইবার ক্রাইমের ঘটনায় ৯২ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ১৮৩ জন। জলদস্যু ও বনদস্যু গ্রেফতারে সাফল্য দেখিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭৫ জন জলদস্যু ও ১৬০ জন বনদস্যুকে গ্রেফতার করেছে। মানব পাচারের ঘটনায় তাদের হাতে এখন পর্যন্ত মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ১ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে গত এক বছরে ১০৫ টি অভিযানে গ্রেফতার করেছে ২৯৩ মানব পাচারকারীকে। মোট মামলা দায়ের হয়েছে ৮৯ টি। অপহরণের ঘটনায় র‌্যাবের অভিযানে গত এক বছরে গ্রেফতার হয়েছে ৫৭৩ আসামি। চাঞ্চল্যকর হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ৩ হাজার ৮৭৩ আসামিকে এ যাবতকালে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এলিট ফোর্স। গত এক বছরে তাদের সাফল্যজনক অভিযানের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৯৮৭ টি। মোট গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ২৮৮ জন।

ছিনতাকাইকারী, মলম ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের জন্যও র‌্যাব এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এসব সিন্ডিকেটের ৯ হাজার ৮১৮ জন। ২৯১ টি অভিযানে গত এক বছরে গ্রেফতার হয়েছে ২ হাজার ৬২৯ আসামি। দেশি-বিদেশি জালনোট ও হুন্ডি চক্র গ্রেফতারেও র‌্যাবের সাফল্য আকাশছোঁয়া। গত ১৯ বছরে র‌্যাবের জালে ধরা পড়েছে ২ হাজার ১৫৪ জন। শুধুমাত্র গত এক বছরে ৪৫ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৭১ জন আসামি।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‌্যাব ম্যানডেটের আলোকে মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৪৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৮ সালের ৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে গুরুত্ব আরোপ করে র‌্যাবকে নির্দেশ দেন। ওই সময় ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে মাদকবিরোধী অভিযান বেগবান করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালেও মাদক বিরোধী উল্লেখ্যযোগ্য অভিযান পরিচালনা করে এলিট ফোর্স র‌্যাব। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ১১ হাজার ৩০৭ জন মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার হয়েছে ১১২ দশমিক ৩৭৮ কেজি হেরোইন, ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৬১৪ বোতল ফেন্সিডিল, ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৪৫ পিস ইয়াবা, ৭৭ হাজার ২১৩ দশমিক ৫৯ লিটার বিদেশি মদ, ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৫১ দশমিক ৩৫ লিটার দেশি মদ, ৩২ হাজার ৮৮৬ দশমিক ৪৮ কেজি গাঁজা, ৪৭ হাজার ৬৪ ক্যান বিয়ার, ০ দশমিক ১৭৫ কেজি কোকেন, ২৭.২৫৮ কেজি আফিম ও আইস ১৭ দশমিক ৮১২ কেজি।

কালের আলো/এমএএএমকে