মাঘের শীতেও লোডশেডিং

প্রকাশিতঃ 10:32 pm | January 24, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

মাঘ মাস চলছে। কিন্তু ভরা শীতে আবারও শুরু হয়েছে লোডশেডিং। অথচ বলা হয়েছিল শীত মৌসুমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। থাকবে না লোডশেডিং। প্রথম দিকে লোডশেডিং শব্দটিই উধাও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। দিচ্ছে নিয়মিত লোডশেডিং। শীতে জবুথবু সময়ে এমন পরিস্থিতি হলে গ্রীষ্ম মৌসুমে রমজান ও সেচের সময় যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে সেই ভাবনায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ অনেকের কপালে।

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলে চলেছেন, জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্যই এখন কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আপাতত এই লোডশেডিং মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে দ্রুত এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, সঙ্কট চলছে গ্যাসেরও। বিদ্যুৎ তা-ও আসে, গ্যাস একবার গেলে আর আসার নাম নেই। শীতের কারণে ফ্যানের বাতাসের চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি বেশ কম।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, শীতে বিদ্যুৎ তেমন ব্যবহার করা হয় না। তাই বিদ্যুতের ঘাটতিটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও দিনে অনেকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এছাড়াও গ্যাসের সমস্যাও আছে।

কয়লার অভাবে একদিকে রামপাল আর অন্যদিকে পায়রা থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ মিলছে না। আবার ডলার সঙ্কট এলসি খুলতে না পারায় কয়লার আমদানিও হচ্ছে না পর্যাপ্ত। যে কারণে লোডশেডিং হচ্ছে সারা দেশেই।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) জানিয়েছে, প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে লোডশেডিং তুলে নেওয়া হয়। লোডশেডিংমুক্ত থাকে সকাল ৭টা পর্যন্ত। সকাল ৮টা থেকে আবার লোডশেডিং করা হয়।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বিতরণ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। সঙ্কট যা কিছু সব উৎপাদনে। ইতোমধ্যে সরকার ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আগামী দুই মাসে আরও ৫ শতাংশ করে দাম বাড়ার আভাস দিয়েছে। দাম বাড়ার সঙ্গে ফেব্রুয়ারির শুরুতে তাপমাত্রা বাড়লে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, সেই শঙ্কা জেগেছে গ্রাহকদের মনে।

গত সোমবার ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি সূত্র বলছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) দিনের বেলা ১২টার দিকে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। একই দিন ঢাকার আরেক বিতরণ কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বলছে, তারা ৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। একই দিন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দুপুর ২টার দিকে ৪১৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। এদিন বিকাল ৪টায় সারা দেশে আরইবির লোডশেডিং ছিল ৪৫০ মেগাওয়াট।

এভাবে দিন-রাতের যখনই উৎপাদন কম হচ্ছে, তখনই লোডশেডিং করতে বলা হচ্ছে। সাধারণত শীতে বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়া লোডশেডিং করা হয় না। সেখানে এবার শীত গ্রাহকের জন্য খানিকটা বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা বয়ে এনেছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, দিনের বেলা ১২টার দিকে লোডশেডিং করতে বলা হয় ২০০ মেগাওয়াট। বিকালে তা তুলে নিতে বলা হয়। রাতে আবার লোডশেডিং হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো বলতে পারছি না। উৎপাদন কম হচ্ছে তাই লোডশেডিং হচ্ছে।

একই কথা বলছেন আরইবির সদস্য আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে তাদের ৪১৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে বলা হয়। বিকালে তা বাড়িয়ে ৪৫০ মেগাওয়াট করতে বলা হয়।

দেশে মোট বিদ্যুতের প্রায় ৮৫ শতাংশই উৎপাদন করা হয় গ্যাস ও তেল দিয়ে। এর মধ্যে গ্যাসে ৫১ শতাংশ এবং তেল দিয়ে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মোট ১১ হাজার ৫২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সেখানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার মেগাওয়াট। তবে দিনের বেশির ভাগ সময়ে গ্যাস দিয়ে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

দেশে ফার্নেস অয়েল এবং ডিজেলভিত্তিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৬১৯ মেগাওয়াটের। দিনের কোনো কোনো সময় তরল জ্বালানি থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে ৪০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হচ্ছে। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তেলচালিত বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট করা হয়।

কেন শীতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাশ্রয়ের জন্য এটা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তেল-গ্যাস সবকিছুই সাশ্রয় করতে বলা হয়েছে। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ লোডশেডিং করা হবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। শীতে লোডশেডিং বিরক্তিকর হবে না বলেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। তখন জ্বালানির বেশি প্রয়োজন হবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে এলএনজি আমদানির চিন্তা করছে।

স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উল্লেখ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, এ জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হলেই এলএনজি আনা সম্ভব হবে।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email