প্রযুক্তির এ যুগে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 1:51 pm | September 01, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এমডিজি বাস্তবায়ন করে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দরকার। প্রযুক্তির এ যুগে যে পরিবর্তন আসবে সে জন্য দক্ষ জনশক্তিরও প্রযোজন। তাই কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আগামী প্রজন্মকে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) তিন দিনব্যাপী ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশন উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই চিন্তার সফল বাস্তবায়ন ও পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি পেতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় আনার কাজ চলছে। ১০০টির বেশি টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান স্থাপন হচ্ছে। ৫৯৩টি প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে টেকনিক্যাল জ্ঞান দেওয়া হবে। এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, আজকে যে সারা বিশ্বে একটা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই এক ইঞ্চিও জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার পক্ষে যা সম্ভব, তা যেন উৎপাদন করে।

ছাদ বাগানের প্রতি উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে যদি কিছু উৎপাদন করা যায়, তাহলে বাজারের ওপর চাপ কম পড়বে।

তিনি বলেন, আবারও বলব, উৎপাদন বাড়ানোতে সবাই সক্রিয় হোন, যাতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট না পায়। আমাদের ব্যবস্থা আমাদের নিজেদের করে নিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আজকে শুধু আমাদের দেশ না, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে তারা রেশনিং করছে। কাজেই আমাদেরও সেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেহেতু আমাদের কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হচ্ছে।

‘এখন থেকে আমাদের সবাইকে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে। কোনো রকমের যেন আমরা কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত ব্যয় না করি, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে এত খারাপের দিকে যাচ্ছে, আপনি আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন, ইংল্যান্ড বলেন প্রতিটি জায়গায় কিন্তু…আজকে সেখানে তারা বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, পানির ব্যবহার সীমিত করে দিতে নির্দেশ দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ইউরোপের কোনো কোনো দেশ বলছে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না, হিটিং সিস্টেম থাকবে না। আগামী শীতে তারা কী করবে, সেটা নিয়ে তারা শঙ্কিত। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের মতো দেশ। আমাদের পূর্ব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পূর্ব থেকে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। সঞ্চয়ী হতে হবে। আর তা ছাড়া উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেখানে যা সম্ভব, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে আমরা যেন সবসময় স্বয়ং সম্পূর্ণ থাকতে পারি। সে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত প্রকল্প একেবারে আমাদের আশু শেষ করা প্রয়োজন, সেগুলো আমরা দ্রুত শেষ করব, যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমাদের ধীরগতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করব না। এভাবেই আমাদের পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক মন্দা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাদের যে বিপুল শ্রমশক্তি রয়েছে, তাদের এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। যুক্ত করতে হলে তাদেরকে ট্রেনিং দিতে হবে; শিক্ষিত করতে হবে। আর দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বের আরও কোন কোন দেশে আমাদের শ্রমশক্তি পাঠাতে পারি, সেটাও আমরা খুঁজে দেখছি। ইতিমধ্যে বেশ নতুন নতুন জায়গাও আমরা পেয়েছি।’

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ইনক্রিমেন্টসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুসারে আপনাদের পেশাগত সমস্যাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান হবে। আর আমি খোঁজ নেব কেন দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।’

যুব সমাজের প্রতি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম করেছি। ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। শুধু চাকরির পেছনে ছোটা না, তারাই চাকরি দিতে পারবে।

‘তারা নিজেরা স্বউদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলবে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করছি। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি।’

এ সময় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাকে চার বছর মেয়াদি করে বিশ্বমানের করা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এভাবেই তা থাকা দরকার বলে মনে করি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তিন বছর মেয়াদ করার সিদ্ধান্ত ভেবে দেখতে বলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, আইডিইবির সভাপতি একেএমএ হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আইডিইবির তিন বরেণ্য সদস্য প্রকৌশলীকে স্বর্ণপদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। সম্মাননা পাওয়া তিন জন হলেন- বীরপ্রতীক এমএ হালিম এবং ফজলুল করিম খান ও মোহাম্মদ আলী।

‘জাতীয় সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যে এবারের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনকে ১২টি কর্ম অধিবেশনে বিভক্ত করা হয়েছে।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম