ফাইনাল হয়ে রইল অনন্ত আক্ষেপের নাম
প্রকাশিতঃ 9:02 pm | January 27, 2018
কালের আলো ডেস্ক: নাহ, হলো না। আরও একবার ফাইনাল হয়ে রইল অনন্ত আক্ষেপের নাম। মিরপুরের ‘অভিশাপ’ কাটল না, চার বার ফাইনালে উঠেও বাংলাদেশের জন্য শিরোপা হয়ে রইল অধরা। একটাই শুধু পার্থক্য, এবার আর এত কাছে এসেও এত দূরের গল্প হয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৯ রানের পরাজয়ে বাংলাদেশের তরী ডুবে গেছে তীরে ভেড়ানোর অনেক আগেই।
একজন অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তার ব্যাটে অলৌকিকের গন্ধ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কার্ডিফেও সেই মহাকাব্যিক ফিরে আসার দিনে তার ব্যাট পথ দেখিয়েছিল সামনে থেকে। মাহমুদউল্লাহ যতক্ষণ ছিলেন, বাংলাদেশ আস্থা রাখছিল ভীষণ অসম্ভবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না।
মাহমুদউল্লাহ অবশ্য আক্ষেপ করতেই পারেন। একটু যদি কেউ তাকে সঙ্গ দিত! মুশফিকুর রহিম সেই কাজটা ভালোই করছিলেন, দুজনের জুটিটা জমে উঠেছিল বেশ। কিন্তু একটা ভুল শটেই সব এলোমেলো হয়ে গেল, চতুর্থ উইকেটে দুজনের ৫৮ রানের জুটিটা ভেঙে গেল মুশফিকের বিদায়ে। মাহমুদউল্লাহ তখনও ছিলেন।
মেহেদী হাসান মিরাজ এলেন, কিন্তু তিনিও ৫ রান করে চলে গেলেন। সাইফ উদ্দিন ক্রিজে ছিলেন অনেকক্ষণ, একটা সময় মনে হচ্ছিল বোধ হয় মাহমুদউল্লাহ একজন সঙ্গী পেলেন। কিন্তু এক রান আউটের ভুল বোঝাবুঝিতেই শেষ হয়ে গেল জুটিটা। দুজনের ৩৭ রানের জুটিটা ভাঙার সাথে সাথে বাংলাদেশের এপিটাফও কি লেখা হয়ে গেল?
তারপরও তো আশা ছিল। মাশরাফি ব্যাট হাতে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন অনেক বার। কিন্তু আজ অভিষিক্ত মাদুশঙ্কার ফুলটস বলে আউট হয়ে গেলেন ৫ রানে। রুবেল ও মোস্তাফিজকে নিয়ে এরপর রান তাড়া করাটা ছিল বৈঠা ছাড়া ডিঙ্গি নৌকায় মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মতো। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ৭৬ রানে মাহমুদউল্লাহ আউট হলেন, মাদুশঙ্কার দারুণ একটা কীর্তি হয়ে গেছে। অভিষেকে পেয়ে গেছেন হ্যাটট্রিক।
আফসোসের গল্পটা অবশ্য আরও আগেই শুরু। সাকিব আল হাসান এই ম্যাচে ব্যাট করতে পারেননি। তিনে নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেছিলেন, অথচ আততায়ী চোট আজ তাকে দর্শক বানিয়ে দিল।
ভরসা ছিলেন তামিম। কিন্তু প্রতিদিন তো আর তার কাঁধে চড়ে পার হওয়া যাবে না। ৩ রান করে তামিম যেন অধৈর্য হয়েই দিয়ে এলেন উইকেট। এরপর মিঠুন হয়ে গেলেন রান আউট, আর সাব্বির তিনে ফিরে আরও একবার ব্যর্থ নিজেকে প্রমাণ করতে। বাংলাদেশ তখন ২২ রানে হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। সেখান থেকে যা একটু আশা দেখাচ্ছিলেন ওই মাহমুদউল্লাহই।
অথচ বাংলাদেশের বোলিংয়ের পর আশাটা তো উজ্জ্বলই ছিল। উইকেটটা ব্যাট করার জন্য ভালো নয় বটে, কিন্তু ২২২ তো খুব বড় রান নয়।
শ্রীলঙ্কার শুরুটা অবশ্য দারুণ হয়েছিল। দশ ওভার শেষে ওভারপ্রতি যখন প্রায় ছয়ের কাছাকাছি রান রেট ছিল, মনে হচ্ছিল এই পিচে ৩০০র কাছাকাছিও খুবই সম্ভব। কিন্তু সময় যতই গড়াতে থাকল, এই মাঠে ব্যাট করা হয়ে গেল ভাঙা বন্দুক দিয়ে বাঘ মারার মতোই কঠিন। এতোটাই যে, ধুঁকতে ধুঁকতে শ্রীলঙ্কা ২২১ রান করেই অলআউট হয়ে গেল।
তার আগে মিরাজ শুরুতেই ফিরিয়ে দেন গুনাথিলাকাকে, আর ৯ বলে ২৮ রান করে উড়তে থাকা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে সবচেয়ে বড় ব্রেকথ্রু দিয়েছেন মাশরাফি। ২০ ওভার পরেও রুবেল বল হাতে পাননি, সাকিব মাত্র এসেছেন, মোস্তাফিজ করেছেন মাত্র দুই ওভার। বোঝাই যাচ্ছিল, মাশরাফি তুরুপের তাসদের শেষের জন্যই রেখে দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাও চালটা বুঝতে পেরে পালটা চালই দেয়। প্রথম ১০ ওভার পর রানের গতিটা হয়ে যায় স্লথ, বুঝেশুনেই খেলছিলেন ডিকভেলা-থারাঙ্গা। ডিকভেলা তাও একটু মাঝেমধ্যে আক্রমণের চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ৫৭ বলে ৪২ রান করে আউট হয়ে যান সাইফের বলে।
শ্রীলঙ্কা এরপর আরও খোলসে ঢুকে যায়। থারাঙ্গা অবশ্য আউট হতে পারতেন। একবার মুশফিক, পরে নাসির ছেড়েছেন তার ক্যাচ। ৮৭ বলে ফিফটি পান, কিন্তু ‘সংগ্রামী’ ইনিংসটা আর বেশিদূর বাড়িয়ে নিতে পারেননি। চান্দিমালের সঙ্গে প্রায় ১৩ ওভারের জুটিতে উঠল মাত্র ৪৫ রান। মোস্তাফিজের বলে শুরুতে রিভিউ নিয়ে পার পেয়েছিলেন, পরের বলেই বোল্ড। মোস্তাফিজ পান ওয়ানডেতে তার ৫০তম উইকেট।
এরপর ব্যাট করা হয়ে যায় আরও কঠিন। থিসারা পেরেরা ব্যবধান গড়ে দিতে পারতেন, কিন্তু ২ রান করে রুবেলের বলে ক্যাচ দেন মিড অনে। শ্রীলঙ্কার বড় স্কোর তখন বড় ধাক্কা খায়। চান্দিমাল এক প্রান্ত আঁকড়ে ছিলেন, কিন্তু রানের গতিটা একদমই স্লথ হয়ে যায়। অন্য পাশ থেকে উইকেটও পড়তে থাকে নিয়মিত। ৬ রান করা গুনারত্নেকে ফিরিয়ে দেন রুবেল, পান নিজের দ্বিতীয় উইকেট।
শেষ ১৫ ওভারে মাশরাফির এক ওভার বাদ দিলে টানা বল করে গেছেন রুবেল-মোস্তাফিজ, শ্রীলঙ্কাও তাতে হাঁসফাঁস করেছে। শেষ দিকে নেমে আকিলা ধনাঞ্জয়া ১৬ বলে ১৭ রানের ইনিংস না খেললে শ্রীলঙ্কার রান ২০০ পেরুতোই কোনোমতে। এর মধ্যে রুবেল দারুণ এক ইয়র্কারে ফিরিয়ে দিয়েছেন চান্দিমালকে, শেষ ওভারে পেয়েছেন আরও একটা উইকেট। ৪৬ রানে চার উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন রুবেল, মোস্তাফিজ পেয়েছেন দুই উইকেট। কে জানত, দিন শেষে সবই অর্থহীন হয়ে যাবে? মাহমুদউল্লাহও হয়ে থাকবেন ট্রয়ের হেক্টর বা মহাভারতের কর্ণ? ফাইনাল হয়ে থাকবে হতাশার আরেক শব্দ?
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ১৪২/৯ (তামিম ৩, মিঠুন ১০, সাব্বির ২, মুশফিক ২২, মাহমুদউল্লাহ ৭৬, মিরাজ ৫, সাইফ ৮, মাশরাফি ৫, রুবেল ০, মোস্তাফিজ ০*; লাকমল ০/২৯, চামিরা ২/১৭, থিসারা ০/৩১, মাদুশঙ্কা ৩/২৬, ধনাঞ্জয়া ২/৩০, গুনাথিলাকা ০/৪)
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২২১/১০ (থারাঙ্গা ৫৬, মেন্ডিস ২৮, ডিকভেলা ৪২, চান্দিমাল ৪৫, ধনাঞ্জয়া ১৭; রুবেল ৪৬/৪, মোস্তাফিজ ২৯/২, মিরাজ ৫৩/১, মাশরাফি ৩৫/১, সাইফ ১৫/১)