৯০’র দশক থেকেই দাবি তুলে ‘পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’
প্রকাশিতঃ 9:03 am | June 25, 2022

মো.গোলাম কিবরিয়া মন্ডল, কালের আলো:
প্রমত্তা পদ্মার বুকে দীর্ঘতম সেতু। অবিশ্বাস্য অথচ বাস্তবতা। বাংলাদেশ কখনও নিজেদের অর্থায়নে এতো বড় প্রকল্প করেনি। সরকার যখন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ এমনকি সরকারের ভেতর থেকেও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কারও কারও ভাষ্য ছিলÑ অর্থনীতি চাপে পড়বে কি না।
একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমিত দৃঢ়তায় বাংলাদেশ এত বড় প্রকল্পের চাপ নিতে পারে এবং বাস্তবায়ন করতে পারে সেটিই এখন ধ্রুব সত্য। দুর্নীতি চেষ্টার যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক এনেছিল, সেটি কানাডার আদালত গালগপ্প বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
পদ্মা সেতু স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বার্থক রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুনিয়াজুড়ে এখন প্রশংসায় ভাসছেন। পুরো আওয়ামী লীগ পরিবার দাবি তুলেছিল তাঁর নামে পদ্মা সেতু হোক। কিন্তু এখানেও উদারতা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। পদ্মা নদীর নামেই করেছেন সেতুর নামকরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই ৯০ দশক থেকেই দাবি উঠেছিল পদ্মা সেতুর। এই দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শরীয়তপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার। তিনি পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
এই সেতু নিয়ে ৯০ দশকের আন্দোলন এবং আন্দোলনের কারণে অনেক মানুষের টিটকারী, হাসি-তামাশার শিকার হওয়ার কথা। অনেকেই তাকে পাগলও বলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। খোকা শিকদার জানিয়েছেন, আন্দোলনের এই পুরো সময়ে ক্ষমতায় ছিল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তারপর বিএনপি সরকার এসে সেটা ভেঙে ফেলে। তারপরের ইতিহাস সবাই জানেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা নিজেদের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু করলেন।’
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি, নানা ধরনের উপহাস আর ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
সেই কথা জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা। যুক্ত হই ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদারের নেতৃত্বাধীন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেই। সে সময় এই সেতুর কথা বলে আজকের বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা পর্যন্ত উপহাস করেছিলেন।’
এনামুল হক শামীম বলেন, ‘নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন পদ্মা সেতু ঠেকাতে। কিন্তু দেশপ্রেমে বলীয়ান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ দমাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী পার হয়ে জাজিরায় গেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অধিকার আদয়ের জন্য চষে বেরিয়েছেন এই জনপদ। আজ সেই নদীর বুক চিরে পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে যেন বঙ্গবন্ধুকেই কুর্নিশ করছে। এই সেতুর ফলে এখানকার জনপদে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে পড়েছে।’
পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৫০ বছর এগিয়ে গেছে বলেও মনে করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা ও সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করার সক্ষমতা তৈরি হলো। এই সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।’
পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই গত রোববার (১২ জুন) পদ্মা সেতু পার হন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। মূলত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে তিনিসহ নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও মাত্র ৬ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হন।
জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ির সামনের আসনে এ সময় বসা ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি বসা ছিলেন প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী। ধারা বর্ণনার মতো ওইদিন ফেসবুক লাইভে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সময় পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম নিজের দুর্ভোগে পড়ার কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘একদিন বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার সময় রাত হয়ে যাওয়ায় কোনোভাবে আর ফেরি পার হতে পারিনি।
মন্ত্রীসভার সদস্য হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। পরের দিন চাঁদপুর দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছি। এমন হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ঘাটের দুইপাড়ে দুর্ভোগে পড়তেন। সামনে থেকে আর কষ্ট হবে না। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, উদ্বোধনের দিনে ১০ লাখ লোকের সমাগম করতে চায় আওয়ামী লীগ।’
কালের আলো/এসবি/এমএম