দ্বিতীয় ইনিংস বিপর্যয়ে দিন শেষ করল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 5:10 pm | November 23, 2018

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।  একে একে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন সৌম্য-ইমরুল-সাকিব-মুমিনুল-মিথুন। ৫৩ রানের মাথায় পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে আছেন টাইগাররা। ১৭ ওভারে ৫৫ রান সংগ্রহ করার পর আম্পায়ার দ্বিতীয় দিনের খেলার ইতি টানেন। বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ১৩৩ রানে।

ওপেনিংয়ে নেমে ব্রাথওয়েইটের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়েন ও কিয়েরন পাওয়েল। সেই জুটিতে হানা দেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার করা বলে এলবির শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফেরেন কিয়েরন পাওয়েল। ১ রানের ব্যবধানে উইকেটে হানা দেন সাকিব আল হাসান। ইনজুরি থেকে ফিরে ইনিংসে নিজের করা প্রথম বলেই শাই হোপকে ১ রানে ফেরার দেশ সেরা এই অলরাউন্ডার।

এরপর ওভারের শেষ বলে আবারো উইকেটে হানা দেন সাকিব। দলীয় ৩১ রানে সাকিবের বলে সৌম্যের হাতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েইট। ফেরার আগে ১৩ রান করেন এই ওপেনার।

বিরতির পর সুনীল অ্যামব্রিসের সঙ্গে জুটি গড়ে এগুতে থাকেন রোস্টন চেজ। তবে সেই উইকেটে হানা দেন অভিষিক্ত নাঈম হাসান। তার করা বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩১ রান করা রোস্টন চেজ। তাতেই টেস্টে উইকেটের খাতা খুললেন নাঈম। ১১ রানের ব্যবধানে আবারো উইন্ডিজ উইকেটে আঘাত হানেন নাঈম। দলীয় ৮৮ রানে তার বলে এলবির শিকার হয়ে ফেরেন ১৯ রান করা সুনীল অ্যামব্রিস।

টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন শিমরন হেটমায়ার। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশেষে তাকে থামালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ১৮০ রানে হেটমায়ারকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৬৩ বলে রান করেছেন হেটমায়ার।

অভিষেকেই বাজিমাত করছেন স্পিনার নাঈম হাসান। সর্বশেষ একই ওভারের তৃতীয় ও ষষ্ঠ বলে দেবেন্দ্র বিশুর পর কেমার রোচকেও এলবির ফাঁদে ফেলে নিজের চতুর্থ উইকেট দখল করেন এই তরুণ।

দলীয় ২২৫ রানে আবারো হানা দেন নাঈম। বোল্ড করে জোমেল ওয়ারিকান ব্যক্তিগত ১২ রানে ফেরান তিনি। আর তাতেই বাংলাদেশের অষ্টম বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট তুলে নিলেন ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ স্পিনার।

দলীয় ২৪৬ রানে সাকিবের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ রান করা শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তাতেই ইনিংস থেমে যায় উইন্ডিজদের।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দিন শেষে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে ৯ রান যোগ করতেই বাকি দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

প্রথম দিনে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে জুটিতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার (১/১)। এরপর ব্যক্তিগত ৩ রানে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান ইমরুল কায়েস। ব্যক্তিগত ১৬ রানে নো-বলের কল্যানে আবারো বেঁচে যান ইমরুল। তবে, মধ্যাহ্ন বিরতির তিন-চার মিনিট আগে বিদায় নেন ওপেনার ইমরুল কায়েস (৪৪)। ওয়ারিকানের বলে শর্ট লেগে থাকা অ্যামব্রিসের তালুবন্দি হন তিনি (১০৫/২)। তার আগে মুমিনুলের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে ১০৪ রান যোগ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর মোহাম্মদ মিথুনকে সঙ্গে করে দ্বিতীয় সেশনের এক ঘণ্টা বেশ ভালোভাবেই পার করেন মুমিনুল। জুটি গড়েন ৪৮ রানের। তবে, পানি পানের বিরতির পর দেবেন্দ্র বিশুর বল অযথাই তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২০ রানে আউট হন মিথুন (১৫৩/৩)। দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২১৬ রান।

শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মুমিনুল হক। দলীয় ২২২ রানে শেনন গ্যাব্রিয়েলের বলে শেন ডরউইচের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান (২২২/৪)। ফেরার আগে ১৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১২০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। চট্টগ্রামের মাটিতে মুমিনুল এর আগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮১ রানের ইনিংসটিও সেখানেই। এবার করলেন এই মাঠে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ারে দেখা পেলেন অষ্টম সেঞ্চুরির।

মুমিনুলের পর সাজঘরের পথে হাঁটেন মুশফিকুর রহিম (২২৬/৫)। ৩ বলে ১টি বাউন্ডারিতে ৪ রান নিয়ে গ্যাব্রিয়েলের বলে এলবির শিকার হয়ে ফেরেন বাংলাদেশি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। দলীয় ২৩০ রানে গ্যাব্রিয়েলের বলেই বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ৩ রানে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ (২৩০/৬)। এরপর মিরাজকে সঙ্গী হিসেবে পান সাকিব। তবে দলের রান যখন ২৩৫, ঠিক তখনই গ্যাব্রিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ফেরেন সাকিব (২৩৫/৭)। আর তাতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

এরপর অভিষিক্ত নাঈম হাসানকে সঙ্গী করে এগুতে থাকলেও দলীয় ২৫৯ রানে ব্যক্তিগত ২২ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ (২৫৯/৮)। তবে, লেজের ঝাপটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দিনের শেষ দিকে নাঈম-তাইজুল জুটিতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৫৬ রান। তাতেই ২ উইকেট হাতে রেখে ৩১৫ রানে প্রথম দিন শেষ করে টাইগাররা।

তবে আগের দিনে ৫৬ রানের জুটি গড়ার পর দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়ে নামেন নাঈম-তাইজুল। তবে বেশিদূর এগোয়নি দু’জনের জুটি। দলীয় ৩২৪ রানে ব্যক্তিগত ২৬ রানে জোমেল ওয়ারিকানের বলে শাই হোপের হাতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাঈম হাসান (৩২৪/৯)। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দলের রান যোগ হওয়ার আগেই এলবির শিকার হন মোস্তাফিজুর রহমান। তাতেই ইনিংস থেমে যায় বাংলাদেশের (৩২৪/১০)।

এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ইনজুরি থেকে দীর্ঘদিন পর ফেরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এই ম্যাচের মধ্যদিয়ে অভিষেক হয় নাঈম হাসানের। ৯৩তম বাংলাদেশি টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে এই ম্যাচে অভিষেক হয় নাঈম হাসানের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর এই সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন খালেদ আহমেদ, আরিফুল হক এবং লিটন দাস। তাদের জায়গায় এসেছেন নাঈম হাসান, সৌম্য সরকার এবং সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশ একাদশ:

সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাঈম হাসান।

উইন্ডিজ একাদশ:

ক্রেইগ ব্রাথওয়েইট (অধিনায়ক), কিয়েরন পাওয়েল, শাই হোপ, শিমরন হেটমেয়ার, সুনীল অ্যামব্রিস, রোস্টন চেজ, শেন ডরউইচ, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ, জোমেল ওয়ারিকান এবং শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।

কালের আলো/পিএম/এমএইচএ