‘গৃহবন্দি’ সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ, কী আছে ‘ভাগ্যে’?

প্রকাশিতঃ 12:42 am | November 19, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ।

তাঁর পারিবারিক সূত্র বলছে, পরিবারের সঙ্গে ঢাকার বনানীর বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে দলীয় প্রার্থীতাকে ঘিরে নিজের সৎ ছোট ভাই জাকির হোসেন ওরফে ক্লাসিক বাবলু’র কূপানলে পড়েছেন তিনি।

নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বাবলু তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সেখানে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কী আছে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্যে? জীবনের গোধূলি বেলায় শেষ ইচ্ছামতো প্রাণের মুক্তাগাছা থেকে তিনি কী আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করতে পারবেন না? এমন প্রশ্নও দলীয় নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে।

জানা যায়, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ নিয়ে প্রথম এবং ২০০১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোশাররফ হোসেন। এরপর ওই সরকারে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের জন্মভিটা মুক্তাগাছা ছেড়ে সদরে এসে প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে।

মূলত নিজের সৎ ছোট ভাই জাকির হোসেনকে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে প্রার্থী করিয়ে দিতেই বড় রকমের এই ত্যাগ শিকার করেছিলেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তবে মুক্তাগাছায় দলটির নেতা-কর্মীদের রাজ্যের আক্ষেপ ছিলো- ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোশাররফ ‘ভুল’ করে মুক্তাগাছা ছেড়ে না আসলে হ্যাট্টিক বিজয় নিয়ে গোটা দেশে নাম কুড়াতে পারতেন। ফলে সেই থেকে তাঁর নীরব ছায়াছঙ্গী হয়ে থাকে ‘আক্ষেপ’ নামের শব্দটি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভুলের চোরাবালি থেকে বেরিয়ে পুনরায় মুক্তাগাছার বাসিন্দাদের সঙ্গেই সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনায় মনোযোগী হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর এই যাত্রায় রীতিমতো ‘পথের কাঁটা’ হয়ে ওঠেন ছোট ভাই জাকির হোসেন ওরফে ক্লাসিক বাবলু।

বড় ভাই আবারো আসনটিতে ফিরে এলে আর মনোনয়ন বা এমপিত্বের স্বাদ কোনটিই নেওয়া হবে না এমন নিশ্চিত ভাবনা থেকেই বাবলু তৈরি করেন একের পর এক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। মোশাররফ হোসেনকে বিচ্ছিন্ন রাখেন নেতা-কর্মীদের থেকে। এরপরেও কোন থেরাপিতেই কাজ না হওয়ায় এখন শেষ পর্যন্ত ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছেন তাকে এমন অভিযোগ দলীয় নেতা-কর্মীদের।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রায় ২৫ বছর এক সঙ্গে পথ চলেছেন মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হারুন।

কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘মোশাররফ হোসেনের পুরো পরিবার জাকির হোসেন বাবলু’র নিয়ন্ত্রণে। গত ৬ মাস যাবত আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। মুক্তাগাছা থেকে মোশাররফ সাহেবের নির্বাচন করতে চাওয়াই মূলত বাবলু’র রাগের কারণ।
তিনি সেখান থেকে এমপি হতে চান। কিন্তু দলটির সাধারণ নেতা-কর্মী এবং আপামর জনসাধারণ আসন পুনরুদ্ধারের স্বার্থে সেখানে মোশাররফ হোসেনকে চান। এই বিষয়টি বাবলু মানতে পারছেন না। তাই হয়তো মোশাররফ হোসেনকে সব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন কী তবে এবার আর নির্বাচন করছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে এই উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, তাঁর পক্ষে কে বা কারা মুক্তাগাছা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আসনটি উপহার দিতে পারবেন।’

একই ব্যাপারে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ কালের আলোকে বলেন, ‘মোশাররফ হোসেনের সৎ ভাই থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যরা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাদের কারণে মোশাররফ হোসেনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে মারাত্নতকভাবে। মুক্তাগাছায় ভোট হলে মোশাররফ হোসেনের বিজয় নিশ্চিত।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী’র ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলু স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইউনাইটেড পরিবার। মোশাররফ হোসেন সাহেব আমার পিতৃতূল্য বড় ভাই। একটি দুষ্টচক্র আমাদের পরিবারকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আসনটিতে আমিই নির্বাচন করবো এবং আমার পক্ষে তিনি এবং তাঁর সন্তানেরা নির্বাচন করবে।’

কালের আলো/এসসি/এএ