মাহে রমজান: পুণ্যের বসন্তকাল
প্রকাশিতঃ 11:32 am | April 05, 2022
মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী :
মাহে রমজান। পুণ্যের বসন্তকাল। মানুষের সাধ্য অনুযায়ী আমল করা সুযোগ দান করা হয়েছে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ মাসের এত পরিমাণ গুরুত্ব ছিল যে রমজান মাসের আগমনের আগে তিনি মানুষদের এ মাসের বরকত ও কল্যাণের বিষয়ে অবগত করতেন। এবাদত-বন্দেগির প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতেন।
রমজানের মূল আমল
এ মাসের মূল আমল হচ্ছে রোজা। রোজার অর্থ, সুবহে সাদিক হতে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এটি একটি সাধারণ কাজ নয়। মানুষের জন্য এক, দুই ঘণ্টা উপোস থাকা কঠিন হয়ে যায়। অসুস্থ হলে পৈথ্য মেনে চলা মুশকিল হয়ে যায়। রোজা অবস্থায় মানুষ নিজে নিজেকে বিরত রাখে। তাকে বিরত রাখার জন্য কোনও প্রাণ আলাদা নেই। কোনও আইন-কানুনের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও শারীরিক ও মানসিক সমস্যার আশঙ্কা। এটি মানুষের প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়াশীল অতুলনীয় পদ্ধতি। যার ফলে আধ্যাত্মিকভাবে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। যে ব্যক্তি নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা অর্জন হয় তার জন্য যেকোনও খারাপ কাজ ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা কঠিন বিষয় নয়। এই জন্য আল্লাহপাক রোজাকে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম করে দিয়েছেন। রমজান মাসকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে।
রোজার হাকিকত কি?
পৃথিবীতে প্রত্যেক বস্তুর বাহ্যিক আকৃতি ও মূল আকৃতির মাঝে একটি পার্থক্য পাওয়া যায়। বাঘের ছবিতে বাঘের শক্তি এবং আগুনের ছবিতে আগুনের গরম আসে না। শিশুরা বাঘের ভয়ংকর খেলনা নিয়ে রাতদিন খেলাধুলা করে। আগুনের ছবি দিয়ে মানুষ ঘর সাজায়। কিন্তু যদি বাস্তবে দুর্বল বাঘও হতো তাহলে বাহাদুর ব্যক্তিরাও কাছে যাওয়ার সাহস পেতো না। আগুনের একটি অঙ্গার যদি হতো তাহলে ঘর জ্বালিয়ে দিতে যথেষ্ট হতো। ইবাদত-বন্দেগিতেও বাহ্যিক আকৃতি ও মূল বস্তুর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। শুধু পানাহার বর্জন করা রোজার বাহ্যিক আকৃতি বা ছবি, মূল বিষয় নয়। এর জন্য রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার রোজা হবে না। যে ব্যক্তি পরনিন্দা করে ও অন্যের দোষ চর্চা করে তার রোজা হবে না। হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অনেক রোজাদারের রোজা শুধু উপবাস ব্যতীত আর কিছুই হয় না। এটি রোজার বাহ্যিক আকৃতি। এই আকৃতি প্রাণশূন্য।
রোজার মূল বিষয় কী?
রোজার মূল বিষয় হচ্ছে, রোজার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে আল্লাহপাকের ভালোবাসা ভরে যাবে। আল্লাহর প্রেমে ব্যাকুল হয়ে যাবে। গুনাহর প্রতি ঘৃণা আসবে। তার দৃষ্টি একটি পুতপবিত্র দৃষ্টি হয়ে যাবে। জিহ্বা অহেতুক কথাবার্তা পরিহার করবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমলের দ্বারা স্বাদ উপভোগ করবে। যেভাবে একজন প্রেমিক তার প্রেমাস্পদকে খুশি করার জন্য উপবাস ও দুনিয়ার স্বাদ আস্বাদন ত্যাগ করে দেই। এভাবে যদি কোনও ব্যক্তি রোজা রাখে তাহলে নিশ্চিত তার নিজের প্রশিক্ষণ ও আত্মশুদ্ধি হবে। নিজের মাঝে খারাপ থেকে বিরত থাকার যোগ্যতা অর্জন হবে। নিজের প্রবৃত্তির গোলামি থেকে মুক্তি লাভ করবে। এই প্রশিক্ষণ আগামী ১১ মাস আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির ওপর চলতে সক্ষম হবে। এজন্য রোজার হাকিকত এর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধন করতে হবে। রোজা হচ্ছে আল্লাহর হুকুমকে নিজের ইচ্ছার ওপর প্রাধান্য দেওয়ার নাম।
রমজান রহমত, বরকত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহ পাক রমজানের রোজা ফরজ করেছেন তাকওয়া অর্জন করার জন্য। যারা এই পবিত্র মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটায়। জিনিসপত্র গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষকে কষ্ট দেয়, তারা কখনও রমজানের মূল বিষয় তাকওয়া, তা অর্জন করতে পারবে না। আসুন এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করি এবং পাপ ও গুনাহমুক্ত জীবন গঠনের জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা-সাধনা করি।
লেখক: খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা।