দুর্নীতির ৩২ উৎস চিহ্নিত করে রাষ্ট্রপতির কাছে ২৪ সুপারিশ দুদকের
প্রকাশিতঃ 10:53 pm | March 20, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিষয়টি উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে।
সরকারের আরও মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত অধিদপ্তরের নামও রয়েছে এই তালিকায়। এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ৩২ টি উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। উৎস বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছে ২৪ টি। রবিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলে পূর্ণাঙ্গভাবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগমে এবং সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তিতে জনহয়রানি লাঘব হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
দুদকের জনসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ, দুই কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান (অনুসন্ধান) ও জহুরুল হক (তদন্ত) এবং দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বঙ্গভবনে যান। চার সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির কাছে দুই বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেন।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৯(১) ধারা মোতাবেক প্রতিবছর দুর্নীতি দমন কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অতিমারির কারণে ২০২০ সালের প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই বাস্তবতা বিবেচনায় এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একত্রে প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে কমিশনের কার্য-সম্পাদন, সম্পাদিত কাজের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জবাবদিহি এবং সরকার প্রদত্ত সম্পদের ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্যসহ কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।’
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্ব-উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত ও জনবান্ধব হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি ও জনসেবা সংক্রান্ত সফলতা ও সীমাবদ্ধতার দিকগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরে প্রেরণ করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, বার্ষিক প্রতিবেদনে দুদক দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত ও সুপারিশ করা ছাড়াও দুই বছরের কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেছেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক শক্তিকে জাগ্রত করার প্রয়াসে নানাবিধ অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এবং শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে সারা দেশে ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ গঠন এবং ৫ হাজার ৭৫৬টি সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
একই সূত্র মতে, কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক সেল (যাচাই-বাছাই কমিটি) ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ বাছাই করে ৮২২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে এবং ২৪৬৯টি অভিযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে। ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ থেকে ৫৩৩টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ এবং ২ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে কমিশনের স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট যাত্রা শুরু করে। ওই ইউনিটের অধীনে ২০২০ সালে আদালতের আদেশে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে এবং ১৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
২০২১ সালে ৩২৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে এবং ১ হাজার ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার) অবরুদ্ধ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কালের আলো/বিএস/এমএম