বাবা আত্মকেন্দ্রিক রাজনীবিদ ছিলেন না : পরশ

প্রকাশিতঃ 9:22 pm | December 04, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির সন্তান ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, আমার প্রিয় যুবলীগের ভাই ও বোনেরা আপনাদের নেতা, শেখ ফজলুল হক মণি আমার বাবা। বাবাকে আমরা খুব কম পেয়েছি। আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। বাবার কর্ম আজো বেঁচে আছে, বাবার লক্ষ্য রাজনৈতিক অনুসারীদের মধ্যে। বাবার প্রতি তাদের যেই ভালোবাসা আর সম্মানবোধ সেটা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাবা আমাদের সাথে খুবই বন্ধুসুলভ ছিলেন। আমাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতেন। স্বপ্নের মত ছিল দিনগুলি। বাবার যেই বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, সেটা হল বাবার কর্ম ও বাবার মমত্ববোধ। তিনি আত্মকেন্দ্রিক রাজনীবিদ ছিলেন না, নেতা-কর্মীদের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম মমত্ববোধ ও দরদ। একজন কর্মী মারা যাওয়ায় আমি বাবাকে শিশুর মত কাঁদতে দেখেছি। বাবার কর্ম আজো বেঁচে আছে, বাবার লক্ষ্য রাজনৈতিক অনুসারীদের মাঝে। বাবার প্রতি তাঁদের যেই ভালবাসা আর সম্মানবোধ সেটা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ ফজলুল হক মণি: সৃষ্টিশীল তারুণ্যের প্রতীক’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পরশ এসব কথা বলেন।

শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, শেখ মণি’র রাজনৈতিক পরিচয় আপনাদের জানা। শেখ মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করে যুবসমাজকে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার কাজে নিয়জিত করে একটা সুখী, সমৃদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন দেখে ছিলেন। স্বল্প উন্নত রাষ্ট্র থেকে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে আগামীর সংগ্রাম কি, প্রতিকূলতা কি। চিহ্নিত করতে হবে সেই সংগ্রামের ধরণ কি; প্রতিকূলতার বৈশিষ্ট কি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘ সংগ্রামী পথ পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ জাতীসংঘের অনুমোদনে স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে। তাই আমাদের সংগ্রামটা এখন ভিন্ন রকম। আমাদের আগামীর সংগ্রাম হবে একটা ন্যায়-পরায়ণ, মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, মেধাভিত্তিক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আমাদের কি কি করণীয়? প্রথমে ধরি ন্যায়-পরায়ণ সমাজ গঠনে কি করণীয় এবং কি উপকারিতা? ন্যায়-পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা গঠনে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে। সাফল্য অর্জন করতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। কাকে ডিঙ্গাইয়া কোথায় উঠবো এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকলে কাউকে ডিঙ্গানোর প্রয়োজন হবে না। যোগ্যতাই সাফল্যের দরজায় পৌঁছে দিবে। কাউকে ঘুষ, বা তদবির করা দরকার পরবে না। কোন বড় ভাইয়েরও দরকার হবে না। কোথাও ধর্নাও দিতে হবে না। যে কোন উন্নত-সভ্য সমাজ সৃষ্টিতে ন্যায়-পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা পূর্বশর্তে। এটাই সুশাসন কায়েম করার অন্যতম পন্থা।

যুবলীগ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইতোমধ্যে আপনাদের কৃতিত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ মানবিক যুবলীগে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন আপনাদেরই হাত ধরে আগামীর যুবলীগ এদেশে মানবিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করবে। যেই সমাজে আপনাদের মানবিকতাই প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে এবং এই মানবিকতাই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে। মানবিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হলে অন্যায়, অবিচার থাকবে না এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও মেধা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বপ্রথমে দরকার যুক্তিনির্ভর পরিবেশ ও মন-মানসিকতা। চিন্তা-ভাবনায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। গবেষণামূলক মতবাদে আমাদের বিশ্বাস আনতে হবে, শুধুমাত্র শিখানো বুলি দিয়ে তোতা পাখির মত বক্তব্য-বিবৃতি দিলে চলবে না। যেটা বলব সেটাতে বিশ্বাস করতে হবে। যেমন ধরেন, আমি বিশ্বাস করি “শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এদেশের প্রতি তাঁর সর্বাধিক দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারের কোন বিকল্প নাই।” এই মতামতে আমি বিশ্বাস করি কারণ আমি এই মতামত যুক্তি ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করতে পারব। যুক্তিনির্ভর পরিবেশ সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের উপর সমাজের প্রভাবশালী উচ্চশ্রেণীর কর্তাদের কর্তিত্ব কমে যাবে। কুসংস্কার থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।

পরশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করতে, একটা আধুনিক, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের লক্ষ্য। যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য সঙ্কুচিত ও নিয়ন্ত্রিত থাকবে। সবার সমান অধিকার থাকবে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে যাবে। বাঙালি শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটবে। একটা প্রকৃতপক্ষে প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, মর্যাদাশীল, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে সৃষ্টি করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যে বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় সারা বিশ্বে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, তাই আমার স্বপ্ন যুবলীগ প্রকৃতপক্ষে সুশৃঙ্খল একটা প্রগতিশীল জনদরদি সংগঠনে রূপান্তরিত হবে। যুবলীগ শোষণমুক্ত ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। যুবলীগের প্রসার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহিঃবিশ্বেও বিস্তার লাভ করুক এই আমার কামনা এবং সকল সংকটে ও সংগ্রামে যুবলীগে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের লক্ষ্য দক্ষ ও মানবিক যুবশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সম্মান সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া।

অনুষ্ঠানে ধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের জন্মদিনে স্মরণসভা করবো এটা কখনও ভাবিনি। জন্মদিন যেমন আনন্দের তেমনি জন্মদিনে স্মরণসভা অত্যন্ত বিয়োগান্তক বেদনা বিধুর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা শুধু প্রমাণ করেননি, তাকে শুধু বাস্তবায়িত করেননি, এটাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন শেখ মণি ভাই। তিনি কারান্তরীণ হওয়ার আগে চারণের বেশে সারাদেশ ঘুরে ছয় দফাকে জনগণের অন্তরে গ্রথিত করেছেন। ছয় দফাকে কেন্দ্র করে মনি ভাই হরতাল পালন করেন। সেই হরতালকে সফল করেছেন নারায়ণগঞ্জের আদমজীর শ্রমিক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের সমন্বয়ে, এ সন্বয়ের মূল কারিগর ছিলেন মণি ভাই।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে একইভাবে বলতে হবে ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে যুবলীগ আছে শেখ হাসিনার সাথে।

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আজ প্রোগ্রামে আসার সময় দেখলাম বিএনপি-ছাত্রদলের কুলাঙ্গাররা দেশের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুসহ মণি ভাইকে যারা হত্যা করেছে, আরজু মণিকে যারা হত্যা করেছে, সেই জামায়াত-বিএনপির দোসররাই আজকে দেশের বিরুদ্ধে, নেত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। এ হত্যাকারীরা আবার নতুন করে মাঠে আসতে চায়। যুবলীগের বন্ধুরা, শেখ মণির আত্মাকে শান্তি দিতে হলে, বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে শান্তি দিতে রাজপথে থেকে এ জামায়াত-শিবির কুচক্রীমহলকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মঞ্জুর আলম শাহীন, ডা. খালেদ শওকত আলী, শেখ ফজলে ফাহিম, সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. নবী নেওয়াজ, মো. এনামুল হক খান, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজ উদ্দিন আহমেদ, মো. জসিম মাতুব্বর, মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

কালের আলো/এসবি/এমএম