ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর নিজের মাকে খুঁজে পেলেন কুদ্দুছ
প্রকাশিতঃ 8:34 pm | September 25, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:
১০ বছর বয়সে রাজশাহীর আত্রাই উপজেলায় হারিয়ে যান কুদ্দুছ মুন্সী। ৭০ বছর পর সেই কুদ্দুছ ফিরলেন নিজ মায়ের কাছে। মূলত এক ফেসবুক পোস্টের কল্যাণে ৭০ বছর পর নিজের মা ও পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন কুদ্দুছ মুন্সী।
দিন দশেক আগে আইয়ূব আলী নামের পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুছ।
সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুছকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এ দেখা হয়। ছেলে মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত শতাধিক নারী-পুরুষের চোখে পানি চলে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুদ্দুস মুন্সির যখন ৭ বছর তখন তার বাবা কালু মুন্সি মারা যান। কুদ্দুস মিয়ার বয়স ১০ বছর হওয়ার পর তার মা তাকে লেখাপড়া করাতে নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের পুলিশ সদস্য আবদুল আউয়ালের সাথে রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে যাওয়ার পর হারিয়ে যায় কুদ্দুস মুন্সি। অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে খুঁজে পায়নি আউয়াল মিয়া।
হারিয়ে যাওয়ার পর কুদ্দুস মুন্সিকে আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের নিঃসন্তান সাদেক মিয়ার স্ত্রী লালন পালন করেন। ৩০ বছর বয়সে কুদ্দুস মুন্সি বাগমারা উপজেলায় বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। বর্তমানে তার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে রাজ্জাক মুন্সি ইরাকে ও দ্বিতীয় ছেলে জান্নান মুন্সি সৌদি আরব থাকেন। ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি বাড়িতেই থাকেন। ৫ মেয়ের সবার বিয়ে হয়ে গেছে।
গত ১২ এপ্রিল আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এমকে আইয়ূব নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুস মুন্সির ছবি দিয়ে তার হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওটি দেশ বিদেশে ভাইরাল হয়। এই ভিডিওর সূত্র ধরে কুদ্দুস মুন্সির নিজ গ্রাম নবীনগর উপজেলার কয়েকজন গত ৫ সেপ্টেম্বর আইয়ূবের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে তারা সিংশাইর গ্রামে গিয়ে কুদ্দুস মুন্সির সাথে ভিডিও কলে মায়ের সাথে কথা বলান। ছেলের হাতের কাটা চিহ্ন দেখে মা তাকে সনাক্ত করেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুদ্দুস মিয়া, তার ছেলে এবং ছেলের বউদেরকে নিয়ে বাঞ্চারামপুর উপজেলার আশ্রাফাবাদ গ্রামে বোনের বাড়িতে আসেন মায়ের সাথে দেখা করতে। ছেলেকে পেয়ে বৃদ্ধা মা মঙ্গলের নেছা কাঁদতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন কুদ্দুস তুই একদিন ফিরে আসবি এটা আমি বিশ্বাস করতাম, আল্লাহর কাছে সব সময় এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ১০ বছরের কিশোর কুদ্দুস মুন্সিও এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ।
কুদ্দুস মুন্সি জানান, হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মত লালন পালন করেছেন। পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মায়ের সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করছি। বাকি জীবনটা মায়ের সাথেই থাকবো।
আত্রাই উপজেলার এমকে আইয়ূব জানান, কুদ্দুস মুন্সি হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে আমি আমার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। সে ভিডিও সূত্র ধরে কুদ্দুস মিয়ার বাড়ির কয়েকজন মানুষ আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং হাতের কাটা দেখে তাকে সনাক্ত করে। আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ৭০ বছর পর মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছে, তাতে আমার অনেক আনন্দ লাগছে।
কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি জানান, কোনোদিন ভাবিনি আমার দাদিকে দেখতে পাবো। আমার বাবা তার মাকে ফিরে পাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহায় হয়েছেন।
কুদ্দুস মিয়ার বোন ঝর্ণা বেগম বলেন, আমার মা সবসময় বলতেন একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহতায়ালা আমার মায়ের ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি।
কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল