নিজ দল থেকেই বহিষ্কার হচ্ছেন বি. চৌধুরী-মাহি-মান্নান

প্রকাশিতঃ 9:33 pm | October 18, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির ময়দানে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। এবারের খেলায় মাঠে নেমেছে সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ঠাঁই না পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ। নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের একটি অংশ। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন বিকল্পধারার ঘোষণা আসছে।

সদ্য বহিষ্কৃত দলটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলের নেতৃত্বে ওই অংশটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল বলেন, মাহী বি. চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়া একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। বিকল্পধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। তবে বাবার নাম ব্যবহার করে মাহী বি. চৌধুরীর সিদ্ধান্তে দলের অধিকাংশ নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।

তিনি বলেন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের হলেও এখন রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ জন। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবলু, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুন্নু, কৃষক ধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিপরা রহিম, সদস্য নূর মুহাম্মদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতিনসহ ১৭ জনই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।

জানা গেছে, অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বহিষ্কার করে এ দলটির সভাপতি হচ্ছেন দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারী। শাহ আহমেদ বাদল হবেন মহাসচিব। আর জানে আলম থাকবেন যুগ্ম মহাসচিব হয়ে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করে ৭১ সদস্যের একটি নতুন কমিটি ঘোষণা দেয়া হবে।

নতুন এ অংশের নেতারা বলছেন, তাদের নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেই থাকবে। সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বের বিকল্পধারার জন্য অপেক্ষা করছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনের আগেই কাউন্সিল করবে জানিয়ে দলটির একাধিক নেতা বলছেন, নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া বিকল্পধারা বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই কাউন্সিল করে কমিটি দেবে। তবে যদি কোনো কারণে তা সম্ভব না হয় তবে নির্বাচনের পরে কাউন্সিল হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। একইবছর ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০২ সালের ২১ জুন দলের অভ্যন্তরীণ চাপে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর থেকে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয় বি. চৌধুরীর। বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর দলের আরেক নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানকে নিয়ে গড়ে তোলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ। প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় কুলা।

প্রতিষ্ঠার এই ১৪ বছরে দলটিতে কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক উদারতাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ দলটি তৃণমূলে সেভাবে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির রাজনীতিতে ভাগ বসাতে পারেনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টে যোগ দেওয়ার পর পুরনো দল বিএনপি শিবিরের সঙ্গে আবারো রাজনৈতিক যোগসাজশ শুরু হয়। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বদরুদ্দোজা চৌধুরির পুরনো সম্পর্ককে নতুন করে সামনে আসায় তৃণমূলেও আলোচনায় উঠে আসে বিকল্পধারার রাজনীতি।

তবে নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত গত ১৩ অক্টোবর দলটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট থেকে বের হয়ে যাবার ঘোষণা দিলে বিভাজনের আভাস ফুটে উঠে। শেষ পর্যন্ত সে বিভাজন দলটিকে নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এমন গুঞ্জন এখন বেশ ডালপালা মেলছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে।

কালের আলো/এনএম

Print Friendly, PDF & Email