পরীমনির হাতে ‘অশ্লীল’ বার্তা : দেশের প্রচলিত আইনে আইনে অপরাধ ও শাস্তি
প্রকাশিতঃ 11:53 am | September 16, 2021
নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
মাদক মামলায় যেদিন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি, সেদিন তার হাতে মেহেদীতে লেখা ‘ডোন্ট লাভ মি…’ বার্তাটি সবার নজর কেড়েছিল।
এবার সেই মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মেহেদীতে লেখা আরেকটি অশ্লীল বার্তা দিয়েছেন বিতর্কিত এই নায়িকা। লিখেছেন, ‘…মি মোর’। এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা খোলাসাও করেছেন এই অভিনেত্রী।
তবে তার এই বার্তাটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কারণ, পরীমনি জানিয়েছেন- মেহেদি দিয়ে তালুতে ‘মিডল ফিঙ্গার’ এঁকে এবং ‘মি মোর’ দ্বারা বুঝিয়েছেন ‘ফাক (গালি) মি মোর’। তার এই বার্তাটি চরম বিব্রতকর ও অশ্লীল বলে সমালোচনা করছেন দেশের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা।
কারন হিসেবে অভিভাবকরা বলছেন, পরিবারের শিশু-কিশোররা এই আচরণ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
এদিকে বিজ্ঞজনরা বলছেন, দেশের প্রচলিত আইনে এটি ‘অশ্লীলতা’ হিসেবে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে।
সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে তারা যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মোবাইলে এসব আলোচিত ঘটনার ছবি বারবার ভেসে উঠছে। সেগুলো তারা দেখছে। এর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। কারণ হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘মি মোর’ ও ‘মিডল ফিঙ্গার’ এর ছবি দ্বারা কী বোঝাচ্ছে তা তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে। পরিবারের বড়দের কাছে এর অর্থ জানতে চাইলেও তাদের বোঝানো যাচ্ছে না।
বিজ্ঞজনরা বলছেন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পীর এমন আচরণে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে শিশু-কিশোররা। তাই সেলিব্রেটি হিসেবে পরীমনিকে সতর্ক করে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে।
দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পীর এমন আচরণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে মতামত দিয়েছেন বিজ্ঞ আইনজীবীরা। দেশের প্রচলিত পর্নোগ্রাফি আইনের সংজ্ঞায় একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছেন তারা।
বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি আইন, অপরাধ ও শাস্তি
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘‘গ’’ উপধারায় ‘‘পর্নোগ্রাফি’’ এর সজ্ঞায় বলা হয়েছে- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।
এই আইনজীবী আরও বলেন, এখানে নায়িকা পরীমনি পর্নোগ্রাফি আইনের ‘‘গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই’’ সংজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন বলে মনে করছি। তবে কেউ এ বিষয়ে থানায় কিংবা আদালতে অভিযোগ না করলে আইনের প্রয়োগ বিচার পর্যন্ত গড়াবে কেমন করে?
বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, আমরা বাংলাদেশি, আমাদের সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল কালচার আছে। বিপরীতে এই দেশে কিছু লোকজন এবং কিছু নায়ক নায়িকারা আছে, যারা আমাদের সুন্দর কালচারকে টোটাললি অবজ্ঞা করে চলছে। তারা আমাদের সমজাটাকে এমনভাবে দূষিত করছে, যে আমরা বাঙালি সমাজ, আমাদের সুন্দর ঐতিহ্য আছে, সেই জিনিসগুলো ভবিষ্যতে না রাখার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, উনি (পরীমনি) যে সাইনটা দেখিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত অসন্মানজনক। কারণ একেকটি ফিঙ্গার দেখিয়ে, একেকটি মিনিং বোঝানো হয়। এরমধ্যে ‘‘মধ্যমা আঙ্গুল’’ অশ্লীল ইঙ্গিত দিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিদেশে বহুল ব্যবহৃত। অশ্লীলতা প্রকাশে এটির প্রদর্শন কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরীমনি যে সিম্বলটি দেখিয়েছেন, সেটি দেখানোয় যদি কোনো ব্যক্তি অপমানিত বোধ করেন, তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘মিডল ফিঙ্গার’ এঁকে সেটি প্রদর্শন করা নিশ্চিত সামাজিকভাবে ঘৃণা ও অপরাধমূলক কাণ্ড। এমন আচরণে কেউ যদি ক্ষুব্ধ হয় এবং এটিকে ‘বেড ম্যাসেজ’ মনে করে। তাহলে ওই ক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে প্রদর্শনকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বিশেষত শিশুদের মানসিক রোগ নিয়ে কাজ করেন। পরীমনির হাতে অঙ্কিত ‘মিডল ফিঙ্গার’ প্রদর্শনে শিশুদের মনে কেমন প্রতিক্রিয়া পড়ার আশঙ্কা রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, পরীমনি এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। একজন সেলিব্রেটি হিসেবে তিনি আজ যা প্রদর্শন করেছেন তা ঠিক হয়নি। কেননা এটি পাবলিকলি তিনি প্রদর্শন করেছেন। যা অনেক বাচ্চারাও দেখেছে। নিশ্চয়ই তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, হাতের তালুতে লেখার সঙ্গে কী সিম্বল দেখালেন পরীমনি? যে প্রশ্নর উত্তর নিশ্চয়ই বিব্রতকর এবং কোনো অভিভাবক এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, পরীমনিকে এটি মাথায় রাখা উচিৎ ছিলো যে- তিনি একজন পাবলিক ফিগার বা সেলিব্রেটি। ওনার চালচলন, কথাবার্তা বা আচার আচরণ শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক অনেকেই ফলো করছে। তাই কেবল পরীমনি নয়, সেলিব্রেটি সকলকেই আরও দায়িত্বশীল আচরণের মধ্যে থাকতে হবে।
কালের আলো/এসআরবি/এমএম