অবৈধ কাজে ৪২টি কোম্পানির নামে গ্রামীণফোনের অবৈধ সিম

প্রকাশিতঃ 9:52 pm | October 07, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

মোবাইল ফোনে হুমকি, চাঁদাবাজি ও ভিওআইপি ব্যবহারসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহারের জন্য ৪২টি কোম্পানির নামে অবৈধভাবে ৮৬৭টি সিম এ্যাকটিভেট করেন গ্রামীণফোনের বিজনেস ও সেলসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সৈয়দ তানভীরুর রহমান (৩৫)। সিমগুলো বিতরণ করেন ডিস্ট্রিবিউশন হাউস মোনাডিক বাংলাদেশের মালিক তৌফিক হোসেন খান পলাশ (৩৮)। চাহিদাভেদে তারা প্রত্যেকটি সিম বিক্রি করতেন পাঁচশ’ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। শনিবার রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

রবিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত দু’জন ও তাদের অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর।

মঞ্জরুল কবীর বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাষানটেক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শ্রীলঙ্কার এক নাগরিক। জিডির অভিযোগে ওই বিদেশি নাগরিক বলেন, গ্রামীণ ফোনের দু’টি নম্বর থেকে (০১৭৮৯৮২২১৮৯ ও ০১৭৫৫৫৯৩২৯১) তার কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। চাঁদার টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।

র‌্যাব ওই সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, চাঁদা ও হত্যার হুমকিতে ব্যবহৃত সিম দু’টি মাইক্রোকডেস ইনফরমেশন সংস্থার অনুকূলে রেজিস্ট্রিকৃত এবং তৌফিক হোসেন খান পলাশের মালিকানাধীন ডিস্ট্রিবিউশন হাউস মোনাডিক বাংলাদেশের মাধ্যমে ইস্যুকৃত। আর ওই সিম ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন গ্রামীণফোনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (বিজনেস সেলস) সৈয়দ তানভীরুর রহমান।

র‌্যাবের এই অধিনায়ক বলেন, কোনো কোম্পানি ১০টি সিম কিনতে তাদের কাছে চাহিদা জানালে তারা ওই কোম্পানির মালিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অতিরিক্ত আরও সিম রেজিস্ট্রেশন করতেন। অতিরিক্ত সিমগুলো পরে চড়া দামে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করতেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মোট ৪২টি কোম্পানির অনুমতি না নিয়েই তারা এ অতিরিক্ত সিম রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তারকৃত দু’জন প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে তথ্য প্রমাণসহ দেখানো হলে তারা অপরাধ স্বীকার করেন এবং ক্ষমাও চান। উদ্ধার করা সিমগুলো ওই ৪২টি প্রতিষ্ঠানের অগোচরে এ্যাকটিভ করা হয়েছিল। যা ওই ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের সহায়তায় গত ১১ জুন গ্রামীণফোনের প্রতিনিধি তানভীরুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ্যাকটিভেট করা হয়।

এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আপনাদের সাহায্য করেন কি-না জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছিলাম। এ কাজে গ্রামীমণফোনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। ’

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ভাষানটেক থানায় প্রচলিত আইনে মামলা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাইব। এই প্রতারকচক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দু’জনের কাছ থেকে অবৈধ ৫৫৩টি সিমের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ও নয়টি ট্যাবও জব্দ করা হয়।

র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, অন্যের ফিঙ্গারপ্রিন্টে রেজিস্ট্রি ও এ্যাকটিভেট করা এসব অবৈধ সিম দিয়ে অপরাধীরা চাঁদাবাজি, চাঁদাবাজি ও ভিওআইপি ব্যবহারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। জিনের বাদশা, লটারিতে টাকা প্রাপ্তিসহ নানা ধরনের প্রতারণায়ও এসব সিমের ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেলেও সিমগুলো অবৈধ ও অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করায় প্রমাণের অভাবে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা যাচ্ছিল না। এই প্রথম এ ধরনের অপরাধে কোনো কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরে কর্মরতদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল। এখন অপরাধীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছে সূত্রগুলো।

কালের আলো/বাএ

Print Friendly, PDF & Email