অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ, সক্ষমতা সূচকে এবার টপকে গেলো ভারতকে
প্রকাশিতঃ 7:01 pm | December 07, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
দিন কয়েক আগে কক্সবাজারে চার ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গত এক যুগে বিস্ময়কর উন্নয়ন ধারার উচ্চকন্ঠেই প্রশংসা করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদও সব সময় বলে আসছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের বদৌলতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ম্যাজিক এখন পরিচিত। শেখ হাসিনা হলেন এ রাষ্ট্রের ম্যাজিশিয়ান।’
সত্যিই বাংলাদেশ এখন অনেক দেশেরই উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। এরই মধ্যে দেশবাসীর জন্য এসেছে আরেকটি সুসংবাদ।
দক্ষতার সঙ্গে সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে বৈশ্বিক টেকসই প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। চলতি বছর এ সূচকে বাংলাদেশ ১৭ ধাপ এগিয়েছে। ২০২০ সালের সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম যেখানে ভারতের অবস্থান ১২৭তম।
ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে ওপরের অবস্থানে রয়েছে।
গ্লোবাল সাসটেইনেবল কম্পিটিটিভনেস ইনডেস্ক (জিএসসিআই)-২০২০’ সূচকে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এর আগে সম্প্রতি মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভারতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়াল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়। এরপরই বৈশ্বিক টেকসই প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ভারতকে পেছনে ফেলে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে গড় আয়ু। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি উৎপাদন। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বাড়ছে বাজেটের আকার। তবে বাজেট বাস্তবায়নে কমছে পরনির্ভরতা।
গ্লোবাল সাসটেইনেবল কম্পিটিটিভনেস ইনডেস্ক (জিএসসিআই)-২০২০’ সূচকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, টেকসই প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হল- একটি দেশের বর্তমান সম্পদ ধরে রাখা বা বাড়ানোর ভবিষ্যৎ সক্ষমতা নিয়ে আপস না করেই অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদ উৎপাদন ও তা বজায় রাখার ক্ষমতা অর্জন।
বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, আইএমএফ, ওইসিডি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এটি তৈরি করে সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে ‘সলএবিলিটি’ এবং থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান সাসটেইনেবল ইন্টিলিজেন্স।
জিএসসিআই-২০২০ এ বাংলাদেশের স্কোর ৪৩ দশমিক ৩ পয়েন্ট যা গত বছরের তুলনায় স্কোর ৪ দশমিক ২ বেড়েছে। অপরদিকে ভারতের স্কোর ৪২ দশমিক ৪ পয়েন্ট। বাংলাদেশের চেয়ে দশমিক ৯ শতাংশ পয়েন্ট কম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জিএসসিআইয়ের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩২তম। আর ভারত ছিল ১৩০তম অবস্থানে। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ এই সূচকে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে।
জিএসসিআই সূচকে শীর্ষে রয়েছে সুইডেন। এরপর আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ড।
প্রাকৃতিক সম্পদ, সামাজিক সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা, বুদ্ধিভিত্তিক ও উদ্ভাবনী সম্পদ, সামাজিক সুসঙ্গতি ও শাসনসহ বেশ কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা হয় জিএসসিআই তৈরিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ১২৭টি পরিমাণগত সূচকে।
সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ২০১৯ সালের ৪৮ দশমিক ৭ থেকে বেড়ে চলতি বছর ৬০ দশমিক ৮২ পয়েন্ট হয়েছে। যার অর্থ চলতি বছর বাংলাদেশ সম্পদকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে।
এছাড়া প্রাকৃতিক মূলধনে ২০১৯ সালের স্কোর ৩০ দশমিক ৮ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৪০ দশমিক ১৪ পয়েন্ট হয়েছে। এই স্তরটিতে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতা নির্দেশ করে।
এর আগে, আইএমএফ জানিয়েছিল, ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ১০.৫ % কমে ১ হাজার ৮৭৭ ডলারে দাঁড়াতে পারে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনাভাইরাস রোধে দেশব্যাপী কড়া লকডাউনের কারণে তীব্র অর্থনৈতিক সংকোচনে পড়ে দেশটি। অপরদিকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৪ % বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৮৮ ডলারে।
ডব্লিউইও’র পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে, শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় মহামারির কারণে ভারত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপি ৮ % হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়।
এটাও বলা হয় তুলনামূলকভাবে নেপাল এবং ভূটান চলতি বছরে তাদের অর্থনীতি জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আইএমএফ পাকিস্তানের কোনো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।
চলতি বছরের শুরুতে ক্ষুধা নিবারণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০২০ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম। অন্যদিকে এই সূচকে ভারতের অবস্থান ৯৪ তম ও পাকিস্তানের ৮৮ তম। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের (জিএইচআই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল।
কালের আলো/এসআর/জিকেএম