শিক্ষাবান্ধব সফটওয়্যার প্রবর্তন, বিইউপির মুকুটে সাফল্যের নতুন পালক
প্রকাশিতঃ 8:17 pm | November 24, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
দর্শকাসন থেকে মঞ্চে উঠলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। পাশেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, শিক্ষাউপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এমপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসানসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন: বায়োবিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিইউপির, গবেষণায় সহযোগিতার আশ্বাস প্রতিমন্ত্রীর
ল্যাপটপে ক্লিক করেই শিক্ষাবান্ধব সফটওয়্যার ‘কমপ্রেহেনসিভ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, রিমোট প্রক্টরিং এবং প্ল্যাজারিজম চেকার সফটওয়্যার’র উদ্বোধন করলেন শিক্ষামন্ত্রী। শত শত হাতে মুহুমুর্হু করতালি আর উল্লাস। অপরাহ্নের এ সময়টিতেই নিজেদের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত করলো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)।
শিক্ষামন্ত্রীর ক্লিকের সঙ্গে সঙ্গেই বড় পর্দায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যেজ্জ্বল ছবি এবং সেই দৃপ্ত উচ্চারণ-‘২০২১ সালের মধ্যে ডিজিাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।’ এরপর স্ক্রিণে ডা: দীপু মনির অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা সম্বলিত ছবি।
তারুণ্যের দ্বীপ জ্বালানো এ ক্ষণটি ছিল মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর)। রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়াম স্বাক্ষী হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথচলায় সরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ঐ নূতনের কেতন ওড়ানোর বর্ণীল এক সন্ধিক্ষণের।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতায় ‘কোয়ালিটি অব এডুকেশন’ নিশ্চিত করতেই নিজেদের টার্গেট নির্ধারণ করেছে বিইউপি হাইকমান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যপূরণে নিজেদের অঙ্গীকারের পাশাপাশি নতুন দিগন্ত উন্মোচনেও দৃঢ় প্রত্যয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
করোনাকালীন অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রীও। একই সঙ্গে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের দৃপ্ত অঙ্গীকারে বিইউপি জানান দিয়েছে তাঁরাই ‘সেরাদের সেরা’।
কিন্তু কীভাবে ঘটলো এতকিছু? গতানুগতিক চিন্তাভাবনাকে দূরে ঠেলে আধুনিক ও সৃষ্টিশীল চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান নিজের স্বাগত বক্তব্যেই তুলে ধরলেন এক যুগের পথচলার সারসংক্ষেপ।
জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে কবিগুরুকে ধারণ করা এ সময়ের জ্ঞান তাপস আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান নিজের বক্তব্যের সূচনা করলেন রবীন্দ্রনাথের দু’টি চরণে- ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর’।
বলতে থাকলেন-‘বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গত মার্চ মাস থেকে বিইউপির প্রতিটি সদস্য ভয় শুন্য চিত্তে উচ্চ শিরে মুক্ত জ্ঞানের অন্বেষণে নিবেদিত হয়ে যে পথ পরিক্রমায় সঙ্গী হয়েছিলেন তাদের সেই সাহসী কার্যক্রমের পুরস্কারস্বরূপ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সানুগ্রহ উপস্থিতির মাধ্যমে তা যথাযথ পরিণত রূপ লাভ করছে।’

বিইউপির সাফল্য ও গৌরবময় পথচলার ধারাপাত বর্ণনা করে উপাচার্য বলেন, ‘আজ থেকে ১২ বছর আগে বাংলাদেশের কনিষ্ঠ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে বিইউপি। বর্তমানে এর কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে ৫ টি অনুষদ ও ১৬ টি বিভাগে প্রায় ৭ হাজার নিয়মিত শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।
প্রচলিত শিক্ষার বিষয়সমূহের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা, যুদ্ধ কৌশল, শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিসহ উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিইউপি স্বাতন্ত্র্য ও স্বীয় বৈশিষ্ট্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।’
ইতিহাসের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন সেই শৈশবে। আজও তাকে বুকে টেনে নেওয়ার সেই উষ্ণতা অনুভব করেন, নিজের জবানীতেই তুলে ধরলেন সেই স্মৃতিকথা। নিবিষ্ট মনেই উচ্চারণ করলেন-‘১৯৭২ সালে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে যাওয়ার এবং তাকে খুব কাছ থেকে দেখার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। শিশু হিসেবে তিনি আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। যার উষ্ণতা আমি আজও অনুভব এবং লালন করি।’
মুজিব শতবর্ষে বিইউপির একটি যুগান্তকারী উদ্যোগেরও সুসংবাদ এলো উপাচার্যের মুখ থেকে-‘বিইউপিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়ার স্থাপিত হবার পর এ গবেষণা শাখার প্রথম অধ্যাপক ড.সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিইউপির ১৫ জন গবেষক জাতির জনকের রাজনৈতিক জীবনের প্রেক্ষাপট, প্রেক্ষিত এবং বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষণাকর্ম পরিচালনা করছেন। মুজিব শতবর্ষের মধ্যেই গবেষণা কাজ পুস্তক আকারে প্রকাশিত করার কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি।’
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকে অনলাইনে চলমান বিইউপির শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও যুগোপযোগী এবং যে কোনও প্রতিকূলতার মাঝেও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য বিইউপি শিক্ষাবান্ধব এ সফটওয়্যার প্রবর্তন করছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষার্থীদের সার্বিক অ্যাকাডেমিক অগ্রগতি বিষয়ক রিপোর্ট, প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রোফাইল ব্যবস্থাপনা, ভিডিও আপলোড, যে কোনও প্রকার পরীক্ষা গ্রহণ এবং তা রিমোট প্রক্টোরিং এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।
এছাড়াও থিসিস, টার্মপেপার এবং অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ, যা ‘টার্ন-ইট ইন’ প্লেজারিজম চেকার অ্যাপের (Turnitin Plagiarism) এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখার মৌলিকত্ব ও স্বচ্ছতা যাচাই করা সম্ভব হবে। এছাড়াও নতুন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিইউপির প্রশংসা করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অনেকগুলো কারণেই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে স্থান পায় না। প্ল্যাজারিজম (চৌর্যবৃত্তি)- এর কারণে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার যে চর্চা করা উচিত সেটি করা যায়নি। শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা নিতে এসে পড়াশোনা ছাড়া আর সবকিছুই করছে না। এর পেছনে নানান কারণ আছে। তবে উন্নত বিশ্বের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পরিচালিত হয় তার সব উপাদান বিউপিতে আছে। উচ্চ শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিউপিতে শৃঙ্খলায় কোনো ছাড় নেই। সেকারণেই বিইউপি এগিয়ে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি শিক্ষায় বিনিয়োগের গুরুত্ব উপস্থাপন করে বলেন, ‘আমাদের যে তরুণ জনগোষ্ঠী, তাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি করতে হবে। এর জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হারিয়ে যাবে বলে অনেকেই বলছেন। তবে সেই সঙ্গে অনেক সম্ভাবনাও তৈরি হবে। সেই সম্ভাবনার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে।’
শিক্ষায় বিনিয়োগ নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষায় জিডিপির অন্তত চার শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা আজও তিন শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারছি না। তবে অন্যান্য যেসব বিষয়ে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো পক্ষান্তরে শিক্ষা খাতেই বিনিয়োগ হচ্ছে। কারণ সেগুলো শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করছে। দারিদ্র্য যেন কারও উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় আমাদের সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
কালের আলো/জিকেএম/এমএ