অন্তরে বঙ্গবন্ধুর চেতনার বহ্নিশিখা; সেনা সদস্যদের অনন্য অভিযাত্রার সূচনা তেঁতুলিয়ায়
প্রকাশিতঃ 8:50 pm | November 08, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো, তেঁতুলিয়া ঘুরে এসে :
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাঝে প্রথম আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে রাতের ‘সংবাদ পরিক্রমা’য় বেজে উঠেছিল সেই কালজয়ী গান ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি… বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’
ইতিহাসের অমর আখ্যান রচনা করা সেই গানটিই আরও একবার বেজে উঠলো উত্তরের হিমালয় কন্যা তেঁতুলিয়ায়। অংশুমান রায়ের লেখা সেই গানটি কন্ঠে কন্ঠে গুঞ্জরিত হওয়ার ফাঁকেই উজ্জ্বল সূর্যের মতোই দেদীপ্যমান, বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে প্রজ্জ্বলিত করে সাইক্লিং এক্সপেডিশনের অনন্য এক আয়োজন।
অন্ধকার থেকে বাঙালি জাতিকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার রূপকারের জন্মশতবার্ষিকীকে উৎসবের রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আজন্ম বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমকেই আক্ষরিক অর্থে উপস্থাপনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ব্যতিক্রমী অভিযাত্রায় রোববার (০৮ নভেম্বর) সকালে শামিল ১শ’জন সেনা সদস্য।
নিজেদের অদম্য শক্তি ও সাহসিকতার পরিচয় হিসেবেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১ হাজার ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার দু:সাহসিক অভিযানের উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও রংপুর এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুজিববর্ষের সেই মূলমন্ত্রকেই।
অমিত দৃঢ়তায় তিনি উচ্চারণ করেছেন-‘বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা ও আদর্শকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করছে। আজ এরই অংশ হিসেবে মুজিববর্ষ সাইক্লিং এক্সপেডিশন ২০২০ আয়োজন করা হয়েছে।

জনসাধারণ ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত যুদ্ধ এবং অগণিত শহীদের আত্নত্যাগের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র পেয়েছি তাঁরই পতাকা বহন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু উজ্জীবিত সেনা সদস্যগণ। সাইক্লিং এক্সপেডিশনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পদচারিত হবে মুজিববর্ষ উদযাপনের দৃপ্ত অঙ্গীকার।’
ঐতিহাসিক এ শুভক্ষণের প্রারম্ভে দৃষ্টিনন্দন ও চিত্তাকর্ষক এ অনুষ্ঠানের শৈল্পিক মাধুর্যময় উপস্থাপনায় সবুজ শ্যামল আর সুনীল প্রান্তরে মিশে থাকা বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তুলে আনা হয় আলোকময় ঝরনাধারায়।
বলা হয়, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনার মাধ্যমে সুগঠিত হয় একটি চৌকস ও দক্ষ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাতির পিতার অবিস্মরণীয় ত্যাগ ও দেশ পুনর্গঠনে অবদানকে তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছে মুজিববর্ষ সাইক্লিং এক্সপেডিশন ২০২০।
মুজিববর্ষকে ইতিহাসের পাতায় অনাবিল করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনের সমুজ্জ্বল আলো এবং বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার মূলমন্ত্রকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের মূলব্রত।’

বাঙালির মননে, চেতনায়, ভালোবাসায় অমর অক্ষয় এবং অব্যয় হয়ে আছেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির কান্ডারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ বিষয়াদি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গেই নিজের কন্ঠে ধারণ করেন সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের গণঅভ্যুত্থান ও দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। রক্তস্নাত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনসাধারণ ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে জন্ম হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য একটি জনমুখী ও চৌকস সেনাবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তাঁরই দিক নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে প্রণীত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রতিরক্ষা নীতি। জাতির পিতার স্বপ্নে লালিত সেনাবাহিনী আজ বহুগুণে বিকশিত। শুধু দেশে নয় সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাহিনী হিসেবে সুপরিচিত। তারই প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে বর্তমানে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে।’

মুজিববর্ষে কেন এ সাইক্লিং এক্সপেডিশন সেই তথ্যও উঠে আসে জিওসি মেজর জেনারেল নজরুল ইসলামের জবানীতে- ‘তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ১০০ জন সাইকেল আরোহীগণ ১০ টি ধাপে ১ হাজার ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে।
এ কষ্টসাধ্য অভিযানের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতির যে অসাধ্যকে সাধণ করার দৃঢ়তা ও আতœবিশ্বাস রয়েছে তা বিশ্বপরিমন্ডলে আবারও প্রতিফলিত হবে। একই সাথে একাত্তরের চেতনাকে মহিমান্বিত করে তোলার জন্য সবসময় ৭১ জন সাইক্লিষ্ট এই অপরাজেয় সাইক্লিং এক্সপেডিশন চলমান রাখবে।’
কার্যত মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর যে অক্লান্ত পরিশ্রম সেই পরিশ্রমকেই আরেকবার সম্মান জানানো হলো তেঁতুলিয়া থেকে শুরু হওয়া এ সাইকেল যাত্রার মাধ্যমে।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ কালের আলোকে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রজ্জ্বলিত শিখার আলোয় সমগ্র বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করাই এই সাইক্লিং এক্সপেডিশনের মূল উদ্দেশ্য।
মুজিব বর্ষের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সকল সাইক্লিষ্ট আগামী ০৩ ডিসেম্বর টেকনাফে মুজিব বর্ষ সাইক্লিং এক্সপেডিশন সমাপ্ত করবে।’
কালের আলো/এমএএএমকে