দুর্যোগে মোকাবিলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 7:00 pm | September 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ চক্র থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষকে বের করে আনতে অভিযোজনের আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা নয়, করোনা ও ভবিষ্যতের যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, , জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা করে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পেরেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আমরা নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করেছি। লবণাক্ততা, বন্যা ও খরা সহিষ্ণু ফসলের প্রজাতি উদ্ভাবন এবং চাষের মাধ্যমে এ বিষয়ে সক্ষমতা গড়ে তুলেছি।
মঙ্গলবার(০৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলাদেশে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের (গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন-জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, হিমবাহে ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয় ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। এমনকি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।’
গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেকটি এসে আঘাত হানে, ফলে যেকোনো অগ্রগতি উল্টে যায়।

এই চক্র ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়াকে দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন, গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি রোধে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছি এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছি। আমাদের সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই সেক্টরে ২০০ কোটি ডলার করে ব্যয় করছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ তথা শতবছরের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।
ইউএনএফসিসিসি’র জলবায়ু বিষয়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ এবং ‘ভালনারেবল-২০’ এর সভাপতি পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতায় জিসিএর ঢাকা কার্যালয় সমর্থন দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনন্য নজির স্থাপন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় এখানকার জনগণ বারবার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও পরিবর্তন করার মতো এখনো অনেক কিছু আছে। আমি মনে করি, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও অভিযোজন বিষয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা এবং কর্মসূচি রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত জাতীয় সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
করোনার মধ্যে বাংলাদেশে কার্যালয় চালু করতে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রী জিসিএর সভাপতি বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিসিএর বাংলাদেশ কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
কালের আলো/এসআর/এমএইচএ