শপথ নিয়ে যে কারণে ঢাকা থেকে ‘মধ্যরাতে’ ফিরেছেন নগর পিতা টিটু
প্রকাশিতঃ 7:48 pm | June 02, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ইকরামুল হক টিটু দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নিজ নগরীতে আসার পথে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ শোডাউন হয়েছিল তাকে বরণে। স্থানীয় জনসাধারণের পথে পথে স্বত:স্ফূর্ত এমন আবেগ-উচ্ছ্বাসের বিরল ঘটনাটি ঘটেছিল শনিবার (০৬ এপ্রিল) বিকেল থেকে রাত।
নতুন মহানগরের প্রথম নগর পিতা সোমবার (২৭ মে) শপথ নেওয়ার পর আবারো একই ঘটনার অবতারণার পালা! অথচ স্বয়ং নগর পিতাই বেঁকে বসলেন! সিয়াম সাধনার মাসে নাগরিক দুর্ভোগের আশঙ্কায় দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের শোডাউনে বিধি নিষেধই আরোপ করেন মেয়র টিটু।
কিন্তু নগরবাসীর পরীক্ষিত, কাঙ্খিত ও সফল নেতা যিনি তাকে স্বাগত জানাতে জনজোয়ার তৈরি হলে সেটি ঠেকানোর সাধ্য আছে কার?
এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই নগর পিতাকে ‘নিজ ভূমে’ ফিরতে হলো চুপিসারে। আর এজন্য বেছে নিতে হলো মধ্যরাতকে। একেবারে সেহেরীর শুরুর মুহুর্তে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই বাড়ি ফিরলেন কর্মবীর নগর পিতা ইকরামুল হক টিটু।
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে নগরপিতার আসনে বসে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হওয়ার দিনেও আলোচিত হয় শপথ নিয়ে মেয়র টিটু’র শোডাউন না করার অপার রহস্য নিয়ে। রহস্যভেদ করতেই বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নগরপিতাকে প্রশ্নটি করে বসেন প্রখ্যাত সাংবাদিক মো: শামসুল আলম খান।
মেয়রের বিনয়ী উত্তর-‘পবিত্র মাহে রমজানে শোডাউন করলে স্থানীয় জনসাধারণের ভোগান্তি হবে। এ বিষয়টি চিন্তা করেই আমি সবাইকে শোডাউন করতে বারণ করেছি।’
প্রায় সাড়ে ৯ বছর বিরামহীন গতিতে ময়মনসিংহ পৌরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে দিন-রাত খেটেছেন। কেবল যে দলীয় নেতা-কর্মী বা সমর্থকদেরই তাকে নিয়ে মাতামাতি বা উন্মাদনা রয়েছে বিষয়টি তেমন নয় মোটেও।
নগর পিতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে বলছে, মাত্র মাসখানেক আগে মনোনয়ন ইস্যুতে স্মরণকালের দীর্ঘ শোডাউন থেকেই একটি অভিজ্ঞতা নিয়েছেন মেয়র।
সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের ছাপিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। রেকর্ড জনারণ্যে স্থানীয় নাগরিকদের স্বত:স্ফূর্ততায় অভিভূত মেয়র আবেগ প্রবণও হয়ে উঠেছিলেন। সেই রাতেই অঝোরে কেঁদেছিলেন সংবর্ধনা মঞ্চে। যেখানে তাঁর সঙ্গে ভিজে উঠেছিল হাজারো মানুষের চোখ।’
মেয়র ঘনিষ্ঠ ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা কালের আলোকে বলেন, ‘সেদিন মেয়র নীরবে মধ্যরাতে ময়মনসিংহে প্রবেশ না করলে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার ঠেকানো যেতো না। সততা ও জবাবদিহিতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী সৎ, মেধাবী ও যোগ্য এ নেতাকে স্থানীয় নাগরিকরা হৃদয়ঙ্গম করেন।
ফলে মেয়রের আগমনের সময় গোপন রাখা না হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই সেখানে যেতেন। এতে মাহে রমজানে সড়কে যানজট বা নগরীতে জনজট তৈরি হলে অন্তহীন দুর্ভোগ মোকাবেলা করতে হতো।
কিন্তু নগর উন্নয়নের নেতৃত্বের জনপ্রত্যাশিত স্বার্থক এ নেতা জনগণের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করেন বলেই তিনি শোডাউন না করতে কড়া বার্তা দিয়েছেন সবাইকে।’
এদিকে, নগর ভবনে পুনরায় ফিরে আসার পর মানবিক, উদারপন্থী ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন নগর পিতা মো: ইকরামুল হক টিটু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ বান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত, গতিময় ও মডেল ময়মনসিংহ গড়তেই নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন।
নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে সব সময় সচেষ্ট থাকা এ মেয়র তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা নিশ্চিত, নগরীকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতামুক্ত করা, নতুন ওয়ার্ডসমূহে কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজগুলোকেই প্রথমেই গুরুত্ব দিতে চান।
ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র থাকাকালেই সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে নগরীকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন ইকরামুল হক টিটু। পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের উপকন্ঠের এ শহরে বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করেন।
অঙ্গীকার করেন তিলোত্তমা ময়মনসিংহের ভিশনের। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন সবুজ শহর গড়তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শহরটি দেশের মডেল শহরে পরিণত হয়।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আধুনিক ও শৈল্পিক স্থাপনায় স্থাপন করেন বিভিন্ন ম্যুরাল বা ভাস্কর্য। এর পাশাপাশি নগরীর জয়নুল উদ্যান ও বিপিন পার্কও সৌন্দর্য্য বর্ধনের দৃষ্টান্ত। এক সময় যে নগরীতে জলাবদ্ধতা ছিল প্রধান সমস্যা।
এ সমস্যা সমাধানে বিগত সময়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ১২৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
ইকরামুল হক টিটু এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রথমেই তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা চালু করতে কাজ করতে চাই। যাতে করে নাগরিকরা ঘরে বসেই বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদসহ অন্যান্য সুবিধা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারে।
নগর ভবনের সব কর্মকান্ডকে ডিজিটালাইজেশন করার কথাও জানান মেয়র। তিনি বলেন, এতে করে নগরবাসীর জন্যও সবকিছু সহজ হবে।
মহানগরীর নতুন যুক্ত হওয়া ১২ টি ওয়ার্ডের সব সমস্যা সমাধান ও উন্নত নাগরিক জীবনের প্রত্যাশা পূরণ করতে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে চান মেয়র টিটু।
তিনি বলেন, ‘এসব ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসন করার পাশাপাশি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।
এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণ, যাবতীয় অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবো।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ই-ট্রাফিকিং সিস্টেমে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, নগর ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে।
তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি ভবনে বিল্ডিং কোডের বিষয়ে কঠোর হবে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি ভবনে নিশ্চিত করতে হবে ফায়ার সেফটি। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, মশক নিধন, পরিবেশ বান্ধব, স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করার কাজও সমান গতিতেই চলবে।
কালের আলো/এমআর/এএ