মুরাদনগরে আলোচিত নারী নির্যাতন: বড়ভাই ফজর আলীকে ফাঁসাতে ওই নারীকে হাতিয়ার বানান শাহ পরান
প্রকাশিতঃ 1:59 pm | July 04, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর গ্রামে সংঘটিত নারীর ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মো. শাহ পরানকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। র্যাব বলছে, বড় ভাই ফজর আলীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারই ছোট শাহ পরান। আর এ ঘটনায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ওই নারীকে।
বুধবার রাতে বুড়িচং থানার কাবিলা বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফজর আলীকে গ্রেপ্তারসহ আলোচিত এই ঘটনার নৈপথ্যের গল্প তুলে ধরেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
যেভাবে সংঘটিত হয় বর্বরতা:
২০২৫ সালের ২৬ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভিকটিম নিজ পিতার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় একই গ্রামের শহিদের বড় ছেলে ফজর আলী সুদের টাকা ফেরতের অজুহাতে কৌশলে ভিকটিমের ঘরে প্রবেশ করে। মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাহ পরানের সহযোগীরা—অনিক, আরিফ, সুমন, রমজানসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জন সংঘবদ্ধভাবে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে নারকীয় তাণ্ডব চালায়।
তারা ভিকটিমের ঘরে ঢুকে মব সৃষ্টি করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, শ্লীলতাহানির পাশাপাশি অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এবং পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। বর্বর এই ঘটনায় সমাজে চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং তা গণমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক আলোচিত হয়।
প্রতিশোধের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র:
র্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এক প্রতিশোধপরায়ণতার চিত্র। র্যাব-১১ এর অধিকনায়ক বলেন, কয়েক মাস আগে পারিবারিক বিরোধের জেরে গ্রাম্য শালিসে বড় ভাই ফজর আলী ছোট ভাই শাহ পরানকে প্রকাশ্যে চড় থাপ্পড় মারেন। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে শাহ পরান ঘৃণ্য পরিকল্পনা করে। ঘটনাটি বাস্তবায়নের আগে ভিকটিমের মা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদে ধার নেন, যার মাঝে মধ্যেই ফজর আলী ওই বাড়িতে যেতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভিকটিমের পিতা-মাতা স্থানীয় একটি মেলায় গেলে সুযোগ বুঝে ফজর আলী ওই বাড়িতে যায় এবং ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে শাহ পরানের পরিকল্পনায় আবুল কালামসহ অন্যান্য আসামিরা নারকীয় এ হামলা চালায়। মূলত, ফজর আলীকে ফাঁসানো এবং সামাজিকভাবে ধ্বংস করতেই ভিকটিমকে টার্গেট করা হয়।
র্যাব জানায়, এ ঘটনা ঘটাতে ইমো ব্যবহার করেন শাহ পরান। ইমোর মাধ্যমে তিনি ফজর আলীর প্রবেশের ঘটনা ও বিস্তারিত নির্দেশনা দেন।
গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি:
মুরাদনগরের আলোচিত এ ঘটনায় ফজর আলী ও মব সৃষ্টিকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে র্যাব কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে র্যাবের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা ও গোপন গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ পরান স্বীকার করেছে—পূর্ব বিরোধ ও প্রতিশোধের মনোভাব থেকেই তার নির্দেশনায় এবং দলবদ্ধ সহায়তায় এই পাষবিক ঘটনা সংগঠিত হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কালের আলো/এএএন