তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জীবন
প্রকাশিতঃ 5:47 pm | May 08, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীর জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে বিরাজ করছে অস্বস্তি। বর্তমানে দেশের ১১টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এতে করে মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। হাসপাতালে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ মে) দুপুরে এক সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ খো: হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ দেশের অনেক জায়গায় বিস্তাব লাভ করতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ০৯ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থার্মোমিটারের পারদ ওঠে গেলে সেই অবস্থাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অফিস।
জানা যায়, অব্যাহত তাপ প্রবাহে মানুষের জীবন যেন যায় যায় করছে। অগ্নিদহনে পুড়ছে রাজধানী। বাতাসে যেন অনুভূত হচ্ছে আগুনের হলকা। সকাল থেকে দুপুর গড়াতেই তেতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বেরহলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছে না। রিকশাওয়ালা, কৃষক অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ওষ্ঠাগত গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।
বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। ঘরের বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা, উপর থেকে যেন আগুনই নামছে। তীব্র গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে।
গত বছরের এপ্রিলে উষ্ণতাজনিত অসুস্থতা চিকিৎসার নির্দেশিকা তৈরি করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়েছিল তাপের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়, ক্লান্তিবোধ হয়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, জ্বর হয়, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যায়। এর বাইরে গর্ভবতী নারীদের জন্য বাড়তি কিছু সমস্যা আছে: এতে গর্ভস্থ সন্তান অপুষ্টির শিকার হয়, সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং মৃত সন্তানের জন্ম হতে পারে।
ওই নির্দেশিকায় ২০১৭ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা আছে, তীব্র তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে মৃত্যু ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।
মূলত ওই গবেষণা করেছিল আমেরিকান মেট্রোলোজিক্যাল সোসাইটি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, নেদারল্যান্ডসের রেডক্রস রোড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের পাঁচজন গবেষক এই গবেষণা করেছিলেন। তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধটি যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড মেটোরোলজি আন্ড ক্লাইমেটোলোজিতে ছাপা হয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে। তাপপ্রবাহে মৃত্যু যে বাড়ে, তা নিয়ে আরও গবেষণা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিকায় অন্য একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তাপের কারণে দেশে ১ থেকে ৩ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছিল।
এদিকে, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে লোডশেডিং। এমন অবস্থায় জেনারেটর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।
কালের আলো/এমএএইচএন