জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে ৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিতঃ 2:07 pm | March 09, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সরকারি সহযোগিতার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিদায়ী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। এর চেতনা ধারণ করেই আমাদের সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।’ তিনি ছাত্র-জনতার সাহসিকতার গল্প জনসম্মুখে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যেই এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ‘দেশি-বিদেশি উৎস হতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, ২০২৪-এর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ’ শিরোনামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে সম্পূর্ণ অর্থের জোগান দেওয়া হবে।

জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মতি দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এটি পাঠাতে হবে না। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজ ক্ষমতাবলে এটি অনুমোদন করতে পারবেন। আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে এটিই প্রথম প্রকল্প। এ অভ্যুত্থান নিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেগুলো চলতি বছর অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত অন্যায়-অবিচারের নমুনা সংরক্ষণ করা হবে এখানে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালক ইয়াকুব আলী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনেক ফুটেজ দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সেসব ফুটেজ কিনে সংরক্ষণ করব।’ এসব কাজের জন্য পরামর্শক দরকার কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কারিগরি ও বড় কাজ তুলে আনতে পরামর্শকের প্রয়োজন হয়। তাই দুজন পরামর্শক রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের ওপর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল (ফুটেজ) সংগ্রহে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের ফুটেজ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে এসব দলিল কেনা হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স থেকেও দলিল সংগ্রহ করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১০০টি লটে সংগ্রহ করা হবে এসব দলিল। একই সঙ্গে শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র-জনতার সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০০টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে খরচ হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনের তৃতীয় তলায় একটি জাদুঘর বানাতে খরচ হবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শহীদদের ছবি ও ব্যবহৃত পোশাক সংরক্ষণ করা হবে জাদুঘরে। এসব কাজ বাস্তবায়নে দুই পরামর্শক নিয়োগ বাবদ খরচ হবে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কম্পিউটার ও আসবাব কেনাকাটায় খরচ হবে আরও ১ কোটি টাকা।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে