বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তিপ্রিয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর : সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 11:32 pm | May 28, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তিপ্রিয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অদ্যবধি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।’

বুধবার (২৯ মে) ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

বাণীতে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগ ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২৯ মে বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ উদযাপন হয়ে আসছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে এ দিবসটি আমাদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ এর এই মহান দিনে আমি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত এবং এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্নকারী সকল শান্তিরক্ষীদের জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক অভিবাদন।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরুর পর হতে সুদীর্ঘ ৩ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১,৫৭,০০০ এর অধিক শান্তিরক্ষী মোট ৪০টি স্থানে ৫৬টি শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৫,০০০ সদস্য বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছে। আভিযানিক দায়িত্ব পালনে উন্নত পেশাগত গুণাবলী প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ দায়িত্ব পালনে সর্বদাই নিরপেক্ষ ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একারণেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা সকলের নিকট বিশেষভাবে প্রশংসিত ও স্বীকৃত-যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।’

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আজকের এই গৌরবময় অর্জন সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩১ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৩৯ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন অভিযানে আহত হয়েছেন। আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেই সকল বীর শান্তিরক্ষীদের-যাঁরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। একই সাথে আমি তাঁদের পরিবারবর্গের প্রতি জ্ঞাপন করছি আমার গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা। তাঁদের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ বিশ্ব দরবারে সুনামের সুউচ্চ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আজকের এই গৌরবময় অর্জনের পেছনে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনা ও সুদৃঢ় নেতৃত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তিনটি হেলিকপ্টার ডিআর কঙ্গোতে মোতায়েন করেছে, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি নতুন মাইলফলক। পাশাপাশি, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য পেরুর সশস্ত্র বাহিনীকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান (Remotely Operated Vehicle) প্রদান করা হয়েছে-যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে। আমাদের পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও এখন পূর্বের তুলনায় অধিকহারে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সার্বিকভাবে সুপ্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সেনাসদস্য, উন্নত সরঞ্জাম, বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং উন্নত মূল্যবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিশন এলাকার জনসাধারণ ও জাতিসংঘের আস্থা অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।’

বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষীদের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা, দোয়া ও শুভ কামনা জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করব, সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা বিশ্ব শান্তি রক্ষায় মানবতার পক্ষে পেশাগত দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। একই সাথে আমি জাতিসংঘের সকল সদস্যের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস সফল হোক এই কামনা করি। আগামী প্রজন্মের কাছে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দিতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম