সৃষ্টিকর্তাই এদের বিচার করবেন: রিজভী
প্রকাশিতঃ 2:14 pm | February 03, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামলের মা শামসুন্নাহার বেগম ‘জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই বয়স্কা নারীও জুলুমের শিকার হয়েছেন। তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় এবং তার বৃদ্ধা মাতার সাথেও দুর্ব্যবহার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আক্রমণে শ্যামলের মা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শোকে-বেদনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তার এই মৃত্যু হয়েছে আওয়ামী দুস্কৃতিকারীদের জন্যই। এই অমানবিক নির্মমতার প্রতিবাদ করার ভাষা আমার জানা নেই। সৃষ্টিকর্তাই এদের বিচার করবেন।’
তিনি শামসুন্নাহার বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভান্যুধ্যায়ীদের গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্র প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘গতকাল গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী ‘২৯শে ডিসেম্বর রাতের ভোটের’ প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে শেখ হাসিনার সদাহাস্য চেহারা ও সরকারের আনুকুল্য পাওয়া উৎফুল্ল উচ্ছিষ্ট রাজনীতিবিদের চেহারা দেখে মনে হয়েছিল তারা আনন্দে মাতোয়ারা। মহাভোট ডাকাতির পর অনুশোচনাহীন সরকারের চা-চক্রের এই আনন্দায়োজন দেখে একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়লো, সেটি Pleasure without conscience’ মানে বিবেকহীন আনন্দ। এই আনন্দ একটি সামাজিক পাপ।
তিনি বলেন, ‘গোটা জাতির সাথে নির্লজ্জ মহাতামাশার নির্বাচনের পর উল্লসিত সরকারের চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দেরই সমতুল্য। জনগণের সাথে প্রতারণাকারী সরকারের জয়োল্লাসের চা-চক্রে দেশের গণতন্ত্রমণা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণরত কোনো রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করেনি। যারা জনগণের ভোট লুট করেছে তাদের সাথে গণতন্ত্রপ্রেমী কোনো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী কেউই সেই লুটের আনন্দের পাপে অংশগ্রহণ করেনি। এটাই জনগণের বিজয়।’
মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর ভুয়া ভোটের সরকারের অনুগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দুর্দশাগ্রস্ত গণতন্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কতটুকু সুষ্ঠূ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে এ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ষ্ট্যান্ডার্ড’ বিচার করা হচ্ছে, জ্ঞানান্বেষণ বা সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে নয়, বরং চা-সমুচা ও আলুর চপ এর মুল্যে। পৃথিবীর দেশে-দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বজনীন সজ্ঞায় ‘Freedom of learning’ এবং ‘Freedom of research’ এর প্রত্যয় বিধৃত। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে To communicate the truth অর্থাৎ সত্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। এটিই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল Academic tone।’
বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষাব্রতীদেরকে এই শিক্ষা স্বর থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘শেখার স্বাধীনতা, গবেষণার স্বাধীনতার মাধ্যমে সত্যের সন্ধান কখনোই নিশ্চিত হবে না, যদি সেখানে সহাবস্থান ও পরমতসহিষ্ণুতার স্থান না থাকে, মুক্তকন্ঠে বিতর্কের স্বাধীনতা না থাকে। ক্যাম্পাসগুলো একদলীয় দু:শাসনের প্রবল প্রতাপের অংশীদার বলেই এখন শিক্ষার উৎকর্ষতার চেয়ে চা-সিঙ্গারা-চপ-এর উৎকর্ষতার বাণী শুনতে পাওয়া যায়। সুতরাং ডাকসু নির্বাচনে সব ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত না হলে ডাকসু নির্বাচন হবে মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ধারাবাহিকতার আরেকটি সংযোজন।’
কালের আলো/এএ/এমএইচএ