সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালনের বার্তা; সচিবদের সভায় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের

প্রকাশিতঃ 10:37 pm | July 24, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সাধারণত প্রতি মাসেই একবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সভা করার নিয়ম রয়েছে। তবে সরকারের ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে মাহবুব হোসেন নিয়োগ পাওয়ার প্রায় ৭ মাস পর অনুষ্ঠিত হলো এই সভা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা কারণে এ সভাকে ঘিরে অনেকের মধ্যে বাড়তি কৌতূহল তৈরি হয়। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এই বৈঠককে ‘সচিব কমিটির বৈঠক’ না বলে ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির নিয়মিত বৈঠক’ বলেই উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এটি বিশেষ কোনো মিটিং না। আমরা যে নিয়মিত মিটিং করি সেই মিটিং। এটি আগামীকাল ছিল, ওই সময় আমার অন্য একটি প্রোগ্রাম পড়েছে। সেজন্য মিটিং একদিন আগে করেছি।’

সোমবার (২৪ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সরকারি প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে সবসময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়—সরকার প্রতিশ্রুত উন্নয়নকাজের অগ্রগতির খোঁজ-খবর নিতে হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে; নির্বাচনি অর্থবছর হলেও রাজস্ব আদায়ে কোনও ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না; রেমিট্যান্স আহরণে অধিকতর নজর দিতে হবে; রফতানি লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ বাড়াতে হবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ওসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে; অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। এছাড়া সততা ও দক্ষতার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীকে যুক্ত করে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজেদের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মীদের অবহিত করবে। প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে ভার্চুয়ালি সভা করেও বিষয়টি তাদের অবহিত করা যেতে পারে।

জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, অর্থ ছাড়, যেকোনও ধরনের কেনাকাটা, চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বা ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবেও সতর্ক করা হচ্ছে। ঠেকানো হয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের কাজও। সতর্কতার সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনা রয়েছে। অপ্রয়োজনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর সঙ্গে এবার যুক্ত করা হলো—রাজস্ব আদায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রফতানি আয় বাড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা। সব কিছুই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কাজের অগ্রগতি, দেশজুড়ে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দফতর-সংস্থার শূন্যপদ পূরণের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে কী বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব?
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সভা শেষে বেলা সোয়া ১টার দিকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। তিনি এ সময় বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে সিনিয়র সচিব ও সচিবদের নিয়ে এক সভা আয়োজন নিয়ে বিশেষ কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তবে সেই সভা বিশেষ কোনো সভা ছিল না।

আজকের মিটিংয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমরা এই মিটিংয়ে সাধারণত যে জিনিসটা আলোচনা করি সেটাই ছিল। আমাদের অনেকগুলো প্রস্তাব ছিল। আমাদের কিছু নিয়োগবিধি ছিল, অর্গানোগ্রাম অ্যাপ্রুভ করার বিষয় ছিল সেগুলো আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের যে সরকারি হাসপাতাল ছিল সেই হাসপাতালের নিয়োগবিধিটা আমরা করে দিয়েছি।

নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল কি না- প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, না, না। এরকম কিছু না।

স্কুল সরকারিকরণের বিষয় ছিল কি না- জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটি আমাদের প্রতিটি মিটিংয়ে সাবজেক্ট থাকে। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বাইরেও কয়েকজন সচিব ছিলেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইখানে আমরা কয়েকটা বিষয় আলোচনা করেছি। সেটি হচ্ছে প্রকল্প বাছাই করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যে উইন্ডোগুলো তৈরি হচ্ছে সেখানে সচিবরা যেন একটি বেশি নজর দেন সেই বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। সচিব কমিটি এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভা ছিল বলে অ্যাজেন্ডা থেকে জানা গেছে।

কালের আলো/এমকে/আরআই