প্রথমবার কোন ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করলেন সেনাপ্রধান, দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষতার প্রশংসা

প্রকাশিতঃ 9:45 pm | March 06, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রথমবার কোন ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করলেন সেনাপ্রধান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ইতিহাসে প্রথমবার ঘটলো এমন ঘটনা। মিরপুর ডিওএইচএস-এ নবনির্মিত ফায়ার স্টেশন উদ্বোধনের মাধ্যমে স্থাপিত হলো নতুন এক নজির। ফাল্গুনের ঝির ঝির হাওয়া, নির্মেঘ রোদ্দুর নিসর্গে নতুন মাত্রা যোগ করার সোমবার (০৬ মার্চ) সকালে আনন্দঘন আয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন নবনির্মিত পল্লবী ফায়ার স্টেশন। এ নিয়ে দেশে মোট ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৯৪ টি। 

সেনাপ্রধান নিজেও বললেন, ‘যেকোন সেনাবাহিনী প্রধানের জন্য ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন প্রথম। এটি একটি মহৎ কাজ। আমি খুবই খুশি এ ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করতে পেরে। কারণ এটি করা হয়েছে ডিওএইচএস’র ভেতরে। আপনারা গতকালও রাজধানীতে দুর্ঘটনা দেখেছেন। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় এটির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। এমন প্রয়োজনীয় একটি সার্ভিস আমরা পেলাম। এজন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও ফায়ার সার্ভিসের ডিজিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি)  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিদেরকে স্বাগত জানান। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে একদল চৌকস অগ্নিসেনা সেনাপ্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

দুর্ঘটনা দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে ফায়ার সার্ভিস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ শক্তিতে বলীয়ান ফায়ার সার্ভিস যেকোন দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করেছে নিজেদের। জনমনে কুড়িয়েছে আস্থা। সেবা ত্যাগের মূলমন্ত্র নিয়ে নিজেদের জীবনবাজি রেখে অন্যের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় দিন-রাত একাকার করে নির্ভীক ফায়ার ফাইটাররা পালন করে চলেছেন অর্পিত দায়িত্ব। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদও দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দক্ষতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। 

রাজধানীর পল্লবীতে যাত্রা করা পল্লবী ফায়ার স্টেশনটি ‘এ’ শ্রেণির। চারতলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট স্টেশন ভবনটি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ০.৪১৩ একর জমিতে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সিনিয়র স্টেশন অফিসার, স্টেশন অফিসার, লিভার, ড্রাইভার ও ফায়ার ফাইটার পদসহ  স্টেশনটিতে মোট জনবল ৪২। 

ফায়ার সার্ভিসের নতুন এ স্টেশনটি উদ্বোধনকে ঘিরে দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাদের অনন্য এক মেলবন্ধনের সূত্রপাত ঘটে। পুরো আয়োজনে ‘মধ্যমণি’ ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.সাইফুল আলম, সেনা সদর দপ্তরের অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো.নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহ্বুব-উল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো.নূরুল আনোয়ার, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে যা বলেছেন ডিজি

উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দেশে পরপর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যে যার জায়গা থেকে আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধ করা সম্ভব। ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার। সেখান থেকে জনবল বেড়ে এখন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৭ জন। জনবল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সরঞ্জামাদিও। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও আগুন নেভানোর মতো ৯০ শতাংশ সরঞ্জামাদি আমাদের রয়েছে।’ 

উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিদপ্তরটির আধুনিকায়নে মহাকর্মযজ্ঞের সূচনা করেছেন। এমনটি জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। আমরা বিদেশেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছি। আমাদের ফায়ার সার্ভিস তুরস্কেও ভূমিকম্পে হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করেছে। আমাদের প্রত্যেক ফায়ার ফাইটার প্রশিক্ষিত। আমাদের জনবলকে আরও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। ভলান্টিয়ারদেরও আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যেকোনো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ফাস্ট রেসপন্ডস টিম হিসেবে কাজ করে।’ 

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে রোববারের (০৫ মার্চ) বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ম্যাসিভ দুর্ঘটনা। এটা অন্য কোনো কারণে ঘটেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নাশকতার আলামত মেলেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, সম্ভবত দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা।’ 

রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে এসি বিস্ফোরণ নাকি অন্য কিছু থেকে এই দুর্ঘটনা? এ প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, ‘দুর্ঘটনা নাকি অন্য কারণে সায়েন্সল্যাবের ঘটনা তা জানতে আমি নিজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা একটি টিম পাঠিয়েছিলেন। তারা সেখানে কাজ করেছেন। তাদের বোম ডিসপোজাল টিম জানিয়েছে, সেখানে নাশকতা বা বিস্ফোরকজাতীয় কিছু মেলেনি। এসব থেকে বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি।’ 

পুরান ঢাকার নিমতলী ও চুরিহাট্টার ঘটনার পরও কেমিকেল গোডাউন ও কারখানা সরানো যায়নি। এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সরকার কেমিকেল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের নির্দেশনার পর নতুন করে ফায়ার সার্ভিস কিংবা সিটি করপোরেশন কেউই কেমিকেল গোডাউন করা বা কারখানা স্থাপনের জন্য পুরান ঢাকায় কোনো এনওসি বা অনুমতি দিচ্ছে না। সেখানে এখনো যা হচ্ছে সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কাজ হলো তদন্ত করা, মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা। পুরান ঢাকায় কেন এখনো কেমিকেল গোডাউন, কারখানা কিংবা বিক্রি হচ্ছে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর ভালো বলতে পারবে।’ 

কালের আলো/এমএএএমকে