কওমি মাদ্রাসাকে সরকারি বেতনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়নি : শিক্ষামন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 12:07 am | February 03, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের সরকারি বেতন স্কেলের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাতের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
হাবিবে মিল্লাত তার প্রশ্নে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে সরকারি বেতন স্কেলের আওতায় আনতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চান। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি বেতন স্কেলের আওতায় আনার এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কাঠামো সংগ্রহ করা হয়েছে।
কাঠামোগুলো পর্যালোচনার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘পর্যালোচনা শেষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিউশন ফি’ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত নীতিমালা/গাইডলাইন প্রণয়ন করা হবে। তাছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৯(৪) ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শতকরা তিন ভাগ আসন প্রত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য সংরক্ষণ করে এসব শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।’’
এই বিধান অনুযায়ী মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা স্বল্প বেতনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া করছে বলেও জানান দীপু মনি।
অন্য প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। শর্ট কোর্স সেগুলো করা হচ্ছে। শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডিপ্লোমা এবং শর্ট কোর্সগুলো বহিরবিশ্বে বর্তমান যে বাজার চাহিদা সে অনুযায়ি করা হচ্ছে। আমাদের উচ্চ শিক্ষায় ৭০ ভাগ যেখানে আছে সেখানে আমাদের প্রচেষ্টাগুলোর মাধ্যমে মানে একটা ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। আমি আশা করি এক সময় যে ঢালাওভাবে বলা হতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওখানে কোনো মান নেই, ওখানকার শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে কাজ পায় না। সেটি আর একেবারেই থাকবে না। স্কুল পর্যায়ে যে শিক্ষা সেটি এক সময় জ্ঞান ভিত্তিক ছিলো সেটার সঙ্গে দক্ষতার বৃদ্ধির বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা মাধ্যমিক শিক্ষায় আমরা যে পরিবর্তনগুলো নিয়ে এসেছি, জাতি সংঘের গবেষণাও বেরি এসেছে দক্ষিণ এশয়িা মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব চেয়ে এগিয়ে আছে’।
আমাদের উচ্চ শিক্ষার মান কমেছে এটা আসলে কোনো গবেষণা করে কেউ বের করেছেন তেমন নয়। র্যাংকিংয়ের কথা বলা হয়েছে, র্যাংকিংয়ে কতগুলো বিষয় দেখা হয় তার মধ্যে গবেষণা, বিদেশী শিক্ষার্থী, বিদেশেী শিক্ষক, বিদেশের সঙ্গে এক্সচেঞ্চ এ রকম অনেকগুলো বিষয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে। র্যাংকিংয়ের দিকে কখনই নজর দেওয়া হয়নি। সেই কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। কিন্তু এখন আমরা র্যাংকিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছি এবং খুব সম্প্রতি আমাদের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক ও প্রাইমারি র্যাংকিংয়ে অনেক নীচু থেকে উপরের দিকে ক্রমাগত উঠে আসছে গত দুই তিন বছরে। আমরা এগুলোয় নজর দেওয়ার ফলে বিশেষ করে গবেষণায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। মান পড়ে যাওয়া তো এ দিনের ব্যাপার না। একটা লম্বা সময় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো। শিক্ষক নিয়োগে পুরোপুরি দলীয় বিবেচনায় এক সময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিরো। শিক্ষকের কোনো যোগ্যতা দেখা হয়নি। শিক্ষায়, গবেষণায় কোনো বিনিয়োগ ছিলো না। উচ্চশিক্ষায় আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে তার ফলাফল ইতোমধ্যে আপনারা কতগুলো বিশ্ববিদ্যায়ে নানান ক্ষেত্রে যে তাদের অর্জন রয়েছে দেখতে পারেবন। আমাদের উচ্চশিক্ষার শিক্ষার শিক্ষার্থীরা বিশ্ব যে ডিভেড কমপিটিশন আছে সেখানে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যায়কেও হারিয়েও চাম্পিয়ন হচ্ছে। নাসার রোবোটিক্স এ চাম্পিয়নশিপে চাম্পিয়ন হয়ে আসছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমাদের শিক্ষার মান নেই এটি বোধ হয় বলা সঠিক না। আমাদের ইউজিসির তদন্ত অনুযায়ি ব্যবস্থাগুলো নেয়া হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে হয় তো সব ব্যবস্থা দেখা যায় না। কিন্তু অনেক ব্যবস্থাই এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে, আরও যেগুলো নেয়া সম্ভব নেয়া হবে’।
টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদে জানান, বর্তমানে সারাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ২০ হাজার ৩১৬টি। এর মধ্যে প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে কলেজ ও একটি করে বিদ্যালয় সরকারিকরণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
সংসদে দেওয়া শিক্ষামন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-৮ম) ২,০৫৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-১০ম) ১৬,৫১৬টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৪৪৩ টি। বর্তমানে সারাদেশে ৩৫৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়েছে।
কালের আলো/বিএএ/এমএম